চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে অঢেল সবজির সরবরাহ থাকার পরও স্বস্তিতে নেই ক্রেতারা। শীত নামার সাথে সাথে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা সবজিতে পরিপূর্ণ নগরীর বাজারগুলো। কিন্তু পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারের দামের কোনো সমন্বয় নেই। উল্টো এক কিলোমিটারের মধ্যে পাইকারি, খুচরা ও ভ্যানে এক একটি সবজির তিন রকমের দামের চিত্র পাওয়া গেছে। ফলে ক্রেতারাও বাড়তি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে কাজীর দেউড়ী বাজার থেকে ৫০ মিটার দূরে একটি ভ্যানে সবজি বিক্রেতা মো. শুক্কুর আলীর সাথে কথা হয়। তিনি জানান, তার ভ্যানে থাকা কেজিপ্রতি ফুলকপি ৫০, টমেটো ১৩০, পেপে ৬০, বেগুন ৬০, লাউ ৫০, দোহাজারীর সীম ৮০, সীতাকুন্ডের সীম ৬০, পুঁটি সীম ৭০, মিস্টি কুমড়া কাঁচা ৫০, কুমড়া পাকা ৬০, নতুন আলু ৯০, পুরনো আলু ৭৫, কাঁচামরিচ ৮০, ধনিয়াপাতা ১০০, বরবটি ৮০, মুলা ৪০ ও বরবটি ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন।
এরপর ৫০ মিটার দূরের কাজীর দেউড়ী কাঁচাবাজরে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। একই সবজি ওই বাজারে শুক্কুর আলীর দামের তুলনায় ১০-৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা বাড়তি দামের বিষয়টি শিকার করে বলেন, ‘এই বাজারে বাছাই করে মাল আনা হয়। সবচেয়ে ফ্রেশ সবজিগুলো আমরা নিয়ে আসি। তাছাড়া এখানে দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বাড়তি। তাই বাড়তি দামে বিক্রি না করে উপায় নেই।’
যদিও ভোক্তারা বলছেন, ‘ঠিক কতোটুকু বাড়তি দাম নেয়া যাবে কিংবা কী পরিমাণ মুনাফা করা যাবে সে ব্যাপারে তদারকি সংস্থাগুলোর নজরদারি কম বলেই মনে হয়।’ কৃষিপণ্য বিপণন বিধিমালা অনুযায়ী কাঁচা শাকসবজিতে খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করার নিয়ম থাকলেও তা মানার কোনো লক্ষণ নেই খুচরা বাজারে। উল্টো কোনো কোনো সবজি কেনা দামের চেয়ে দ্বিগুন-তিনগুন পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
চট্টগ্রামের খুচরা বাজারগুলোতে যেসব পণ্য পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই আসে রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়ত থেকে। এই বাজারের দেড় শতাধিক আড়তে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্য এনে বিক্রি করা হয়। এই বাজারটির দূরত্ব কাজীর দেউড়ী কাঁচাবাজার থেকে ১ কিলোমিটারের মতো। শনিবার সেই বাজারে একাধিক আড়তদার জানান, উপরোল্লেখিত সবজিগুলোর দাম সেখানে অর্ধেকেরও কম। কোনো কোনোটির দাম খুচরা বাজারের দামের তিন ভাগের এক ভাগের মতো। অর্থ্যাৎ এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে পাইকারি, খুচরা ও ভ্যানে তিন রকমের দামে একই পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারে দামের এই তারতম্য শুধু কাজীর দেউড়ী বাজারে নয়। নগীরর বহদ্দারহাট, অতুরার ডিপো, কর্ণফুলী কমপ্লেক্স, চকবাজার, হেমসেন লেন, সিরাজউদ্দৌলা সড়কের বাজারের চিত্রও প্রায় একই। এসব বাজারেও পাইকারি বাজারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন দামে বিভিন্ন সবজি বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাজারে প্রচুর সবজি থাকার পরও স্বস্তিতে নেই ক্রেতারা। এমনকি অল্পকিছু দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা হলেও বেশিরভাগ দোকানে মূল্যতালিকাও নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদারকি সংস্থার নজরদারির অভাবে মূল্যতালিকা প্রদর্শন করা হয় না। আর কাঁচা পণ্যগুলোর বেচাকেনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রশিদ ও চালানের ব্যবহার নেই। এসব কারণে এসব পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। যে যার ইচ্ছেমতো পণ্য বিক্রি করতে পারে।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রথমত কৃষকদের বিপণন ব্যবস্থায় যুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এর পাশাপাশি বেচাকেনায় রশিদ ও চালান এবং দোকানে মূল্যতালিকা বাধ্যতামূলক করলে পরিবর্তন আসতে পারে। এরচেয়ে বড়ো কথা হলো- যে আইন আছে সেটাকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তারের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল