মাছুম ও মাহফুজ। ফেনীর পরশুরামের চিথলীয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকার এ দুই ভাই যখন এলাকাবাসীর সঙ্গে কাজ করছিলেন নদীর বাঁধরক্ষায়, তখনো হয়তো তারা বুঝতেও পারেননি জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ মুহূর্তটা অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
গত ৮ জুলাই রাতে বাড়িসংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধটি মেরামতে ব্যর্থ হয়ে যখন বাড়িতে ফিরলেন, তখন দেখেন প্রবল স্রোতের মধ্যে আটকে আছেন তাদের মা, মাছুমের স্ত্রী ও মাত্র এক মাসের শিশু সন্তান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আধ ঘণ্টার চেষ্টায় প্রিয়জনদের উদ্ধার করলেও হারিয়েছেন জীবন ও সংসারের শেষ চিহ্নটুকুও। চোখের সামনে নিজের নতুন বসতঘরের সর্বনাশ নিজেই দেখলেন। ঘরে নেই একটি পাতিল, নেই বিছানার চাদর, নেই একমুঠো চালও। গত রবিবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সেই মুহূর্তের কথা বলতে গিয়ে নিজের কান্না আটকাতে পারেননি দিনমজুর মাছুম। বর্তমানে মাছুম ও তার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বড় ভাইয়ের বাড়িতে। তবে মানসিক যন্ত্রণার পাহাড়টা যেন প্রতিদিন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও ভারী হয়ে উঠেছে। মাছুম ও তার পরিবার বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি করছেন, ফেনীর এ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি টেকসই সমাধান। যাতে আর কখনো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এমন ঘটনার সাক্ষী না হয়। বসতঘর না হারাতে হয় কাউকেই। বন্যা চলে গেলেও ক্ষয়-ক্ষতির এমন চিত্র ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে। সব হারানো মানুষদের হাহাকারে ভারী হয়ে উঠছে চারপাশ। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে এবার ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীতে বেড়িবাঁধের অন্তত ৩৬ স্থানে ভাঙন হয়। যার ফলে জেলার মানুষ কেউ হারিয়েছে বসতঘর, কেউবা মাছের ঘের, অনেকের নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি, ঘটেছে ব্যবসায়িক লোকসান।