সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছিল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু সাড়ে চার বছরে প্রকল্পের কাজ ২০ শতাংশও শেষ হয়নি। মহাসড়কের সিলেট অংশে এখনো বাকি রয়ে গেছে জমি অধিগ্রহণ। বিভিন্ন স্থানে সড়কের একপাশ বন্ধ করে সম্প্রসারণ ও সেতু-কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় বেড়েছে ভোগান্তি। প্রতিদিন মহাসড়কের স্থানে স্থানে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। সিলেট থেকে ঢাকায় যেতে আগে ছয় ঘণ্টা লাগলেও এখন লাগে ১০-১১ ঘণ্টা। আর সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে ভোগান্তির যাত্রার সময় দাঁড়ায় ১২-১৪ ঘণ্টায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটির কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়। কাজ শেষ করতে এখনো তিন-চার বছর সময় লাগবে। সওজ সূত্র জানায়, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেন প্রকল্প গ্রহণের পর থেকেই দেখা দেয় নানা জটিলতা। কখনো নকশায় ত্রুটি, আবার কখনো জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে থমকে দাঁড়ায় কাজ। শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে শুরু হলেও কাজ চলতে থাকে কচ্ছপ গতিতে। মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট অংশের বিভিন্ন স্থানে সড়কের একপাশ বন্ধ রেখে শুরু হয় সম্প্রসারণ কাজ। একপাশ করায় সড়ক ছোট হয়ে আসে। এতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইলের শাহবাজপুর, হবিগঞ্জের মাধবপুর বাজার, অলিপুর রেলগেট ও শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ চত্বর, মৌলভীবাজারের শেরপুর, সিলেটের ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্তত ২০-২৫ কিলোমিটারজুড়ে লেগে থাকে যানজট। সিলেটের বাসচালক ও যাত্রীরা জানান, আগে সিলেট থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগত ৬ ঘণ্টা। এখন ১০ ঘণ্টার আগে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। বৃষ্টি হলে কিংবা মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ১২-১৪ ঘণ্টা সময় লাগে। বিভিন্ন স্থানে সম্প্রসারণ কাজের জন্য সড়ক সরু হয়ে যাওয়া ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কোনো কোনো দিন এ যানজট ২০-৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। ওই সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির চাকা বন্ধ থাকে। এ ছাড়া মহাসড়ক খানাখন্দে ভরপুর থাকায় পুরো যাত্রায়ই যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। ইউনিক পরিবহনের চালক এহিয়া আহমদ জানান, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক পুরোটাই ভোগান্তির যাত্রা। কোথাও পিচ উঠে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে, কোথাও আবার চলছে ছয় লেনের কাজ। যে কারণে চালকদের ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালাতে হয়। যানজটে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে সময় বেশি লাগে, যানবাহনেরও যান্ত্রিক ক্ষতি হয়।
এদিকে সওজ সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত মহাসড়কের কাজ ১৫-২০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সিলেট অংশের কাজ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। এখন পর্যন্ত জায়গা অধিগ্রহণও শেষ করা সম্ভব হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না সিলেটবাসী।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেবাশীষ রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর জমি অধিগ্রহণের কাজে গতি এসেছে। তবে এখনো সিলেট অংশের জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়নি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে না। সড়কের কাজ ছাড়াও ব্রিজ-কালভার্ট, গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন ও খুঁটি বসানোর অনেক কাজ রয়েছে। তাই পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরও অন্তত তিন-চার বছর সময় লাগবে। তবে জনভোগান্তি কমানোর চেষ্টা চলছে।