রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাতটি ট্রেন প্রায় এক যুগ ধরে চলছে টেন্ডার ছাড়াই। চার বছরের জন্য ট্রেন পরিচালনার ইজারা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীদের আশীর্বাদে বারবার করা হয়েছে চুক্তি নবায়ন। এতে রাষ্ট্রীয় গণপরিবহন সংস্থাটি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যদিও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের দাবি, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ট্রেনগুলো পরিচালনা করছে এস আর ট্রেডিং এবং এন এল ট্রেডিং নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সালাউদ্দিন রিপন আওয়ামী লীগের ত্রাণ উপকমিটির সদস্য ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়ে মন্ত্রী ও রেলওয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে রেলওয়েতে। এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের পর টেন্ডার দেওয়া হলে অনেকেই যেমন টেন্ডারে অংশ নিতে পারত, তেমনি সর্বোচ্চ দরদাতাকে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত ট্রেনগুলো ইজারা দেওয়া যেত। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠানের কবজায় ট্রেনগুলো থাকায় রেলওয়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত ৩৭টি ট্রেনের মধ্যে ৩২টিই নিয়ন্ত্রণ করতেন সালাউদ্দিন রিপন ও তার স্ত্রী মিফতাহুল জান্নাত লুনা। এর মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় গত ৩ নভেম্বর রেলওয়ের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে লিজ বাতিলের বিষয়টি জানায়। এরপর নতুন করে ট্রেনগুলো লিজ দেওয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। বর্তমানে পূর্বাঞ্চলের ৭টি কমিউটার ট্রেন সালাউদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এগুলো হলো বলাকা, মহুয়া, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, তিতাস, সাগরিকা ও কর্ণফুলী কমিউটার।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন এবং বাণিজ্যিক বিভাগ জানায়, ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনটি দৈনিক ৬১ হাজার ৬৮০ টাকা করে দেওয়ার চুক্তিতে রেলওয়ে থেকে চার বছরের জন্য ইজারা নেওয়া হয়। চার বছর পর টেন্ডার ছাড়া ২০১৮ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, রেলওয়ের জিএমসহ অন্য কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে আরও দুই বছরের জন্য বাড়িয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত ট্রেনটি পরিচালনা করার দায়িত্ব পান সালাউদ্দিন। ২০২০ সালে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে করোনা মহামারিতে যাত্রীসংকটের কারণ দেখিয়ে রেলওয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের পরামর্শে হাই কোর্টে রিট দাখিল করেন তিনি। এরপর থেকে এখনো বিনা টেন্ডারে কর্ণফুলী এক্সপ্রেসটি পরিচালনা করে আসছে এস আর ট্রেডিং। একইভাবে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এন এল ট্রেডিংয়ের নামে সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনেরও লিজ নেন সালাউদ্দিন। ২০১৯ সালে ট্রেনটির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ায় তৎকালীন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনসহ রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে আবারও দুই বছরের জন্য মেয়াদ বাড়িয়ে নেন তিনি। ২০২১ সালে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে একই অজুহাতে হাই কোর্টে রিট করে এ ট্রেনটিও নিজের দখলে রেখেছেন সালাউদ্দিন রিপন।