নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদে বিয়েবাড়ির স্পিডবোট ডুবে নিখোঁজ তিন শিশুর সন্ধান এখনো মেলেনি। দুর্ঘটনার এক দিন পেরিয়ে গেলেও ডুবুরিদল তাদের উদ্ধার করতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তীব্র স্রোত থাকায় উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটছে। শুক্রবার দুপুরে গাজীপুর ইউনিয়নের পাঁচহাট চরপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিখোঁজরা হলেন খালিয়াজুরীর আন্ধাইর গ্রামের স্বপন মিয়ার মেয়ে লাইলা আক্তার (৭), সামছু মিয়ার মেয়ে সামিয়া (১১) ও নবাব মিয়ার মেয়ে শিরিন (১৮)। এতে বিয়েবাড়ির আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পাঁচহাট আন্ধার গ্রামের নবাব মিয়ার ছেলে রানার বিয়ে ঠিক হয় পাশের কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার মিরকা গ্রামে। শুক্রবার বিকালে গ্রামীণ পার্বণ হিসেবে পানি কাটতে একটি স্পিডবোটে নারী-শিশুসহ ১২ জন ওঠে। পরে স্পিডবোটটি পাঁচহাট চরপাড়া গ্রামের মাঝামাঝি ধনু নদে ভিম জাল দিয়ে মাছ ধরার খোসা নৌকায় উঠে পড়ে। এতে নৌকায় থাকা বাবা-ছেলে ক্ষিপ্ত হয়ে স্পিডবোটচালককে মারধর করতে বোটে লাফিয়ে ওঠেন এবং বোটটি তখন তলিয়ে যায়।
বোটে থাকা নারীরা তাদের শিশুদের বাঁচাতে অনুনয়বিনয় করলেও তারা এগিয়ে আসেনি। এ সময় বোট ডুবে গেলে সাঁতরে আটজন অন্য একটি নৌকায় উঠতে সক্ষম হয়।
তবে বরের বোন শিরিন আক্তারসহ আরও তিন শিশু নিখোঁজ হয়। তবে উষা নামে শিশুর মা ফাতেমা আক্তার বেঁচে গেলেও সন্তানের লাশ এক দিন পর ভেসে ওঠে। স্বজনরা নদ এবং হাওড়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে লাশ খুঁজছেন। অন্যদিকে নারীরা সন্তানের লাশ পাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। স্পিডবোট থেকে বেঁচে ফেরা রোজিনাকে (৩২) ইটনা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানরা জানান, তাঁরা বিষয়টি দেখছেন। নিখোঁজ লায়লার বাবা স্বপন মিয়া বলেন, ‘স্পিডবোটচালকের দোষ থাকলে তাকে পরেও বিচার করা যেত। কিন্তু জহিরুল ও সত্তর মিয়া শিশু-নারীসহ বোটটি ডুবিয়ে দেন। এটি হত্যাকা । আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।’ গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রওফ স্বাধীন জানান, স্পিডবোটটি নৌকার ওপর উঠে গেলে জহিরুলের বাবাসহ তলিয়ে যায়। তাই রাগে জহিরুল বোটের চালকের ওপর ক্ষিপ্ত হন। বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক।
নেত্রকোনা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, শুক্রবার নিখোঁজের পর রাতেই ডুবুরি চলে আসে। রাতে অভিযান হয় না তাই গতকাল সকালে ডুবুরিদল উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে।