ঝলমলে রুপালি পর্দার তারকা হওয়ার স্বপ্ন সবারই থাকে। বিশেষ করে সবাই চান নায়ক-নায়িকা হতে। কিন্তু সে স্বপ্ন কি সবার পূরণ হয়। নায়ক-নায়িকা হতে এসে অনেকে হয়ে যান খল তারকা। তেমনি কজন খলনায়িকার কথা তুলে ধরেছেন -আলাউদ্দীন মাজিদ
মায়া হাজারিকা : মায়া হাজারিকা চলচ্চিত্র জগতে আসেন জহির রায়হানের ‘সংগম’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে। এ নির্মাতার কাছে তিনি নায়িকা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু সহ-নায়িকা হিসেবে যাত্রা শুরু করে একসময় খলনায়িকা হয়ে যান তিনি। প্রায় আড়াই শতাধিক ছবিতে খলচরিত্রে অভিনয় করা মায়া হাজারিকা মাত্র ৫২ বছর বয়সে ১৯৯৬ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
রওশন জামিল : সিনেমার নায়িকা হতে আসা রওশন জামিল খলচরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর অভিনীত প্রথম নাটক ‘রক্ত দিয়ে লেখা’র মাধ্যমে তিনি ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে পদার্পণ করেন। ১৯৬৭ সালে ‘আলিবাবা চল্লিশ চোর’ এবং ১৯৭০ সালে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় অভিনয় শুরু তাঁর। অভিনয় করেন প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায়। ২০০২ সালের ১৪ মে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, টেনাশিনাস পদক, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড, বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, তারকালোক পুরস্কার ইত্যাদি লাভ করেন।
রাণী সরকার : খুলনার মেয়ে আমিরুন্নেসা খানম মেরী চলচ্চিত্রে অভিনয়ে এসে নাম ধারণ করেন রাণী সরকার। তিনি অভিনয় জগতে আসেন মঞ্চনাটকের মাধ্যমে। ১৯৫৮ সালে মঞ্চে ‘বঙ্গের বর্গী’ নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয় শুরু তাঁর। একই বছর তাঁর অভিনীত প্রথম সিনেমা হলো ‘দূর হে সুখ কা গাও’। এরপর ১৯৬২ সালে ‘চান্দা’ ’নতুন সুর’ নামে আরও দুটি সিনেমায় সহ-নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন। আর প্রথম খলচরিত্রে অভিনয় করেন ১৯৬৩ সালে জহির রায়হানের ‘কাঁচের দেয়াল’ সিনেমায়। প্রায় সাড়ে তিন শ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। অভিনয় নিপুণতার জন্য ২০১৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র তাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করে। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই মারা যান তিনি।
সুষমা আলম : সুষমা আলম। নায়িকা হতে না পেরে জাঁদরেল খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেও দর্শক নজর কাড়েন তিনি। এ অভিনেত্রীর আসল নাম শামসুন্নাহার। হাতে গোনা কয়েকটি ছবিতে তিনি পজিটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ অন্যতম। আর ব্যতিক্রমী চরিত্র ছিল ‘এই ঘর এই সংসার’ সিনেমার পারসোনাল সেক্রেটারি হিসেবে জলহস্তিনী চরিত্রে। কিছু কমেডি চরিত্রেও অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি কিছু নাটকেও কাজ করেছেন। এই দক্ষ অভিনেত্রী ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মারা যান।
রিনা খান : আশির দশকে চলচ্চিত্রে আসা একজন দক্ষ খলনায়িকা হলেন রিনা খান। তাঁর প্রকৃত নাম সেলিনা সুলতানা। খলচরিত্রের পাশাপাশি তাকে কিছু পজিটিভ চরিত্রেও দেখা গেছে। চলচ্চিত্রাঙ্গনে অভিষেক ঘটে ১৯৮২ সালে ‘সোহাগ মিলন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। অভিনয় করেছেন প্রায় তিন শতাধিক ছবিতে। তিনি জানান, নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এই জগতে এলেও খলনায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
দুলারী : আশির দশকের নারী খলচরিত্রের অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম দুলারী বাস্তব জীবনে তিনি পরোপকারী ও সমাজসেবক হিসেবে যথেষ্ট সুপরিচিত। আর এমন পজিটিভ চরিত্রেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর অভিনীত সিনেমার সংখ্যা প্রায় আড়াই শতাধিক। তিনি এখনো অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
জাহানারা ভূঁইয়া : জাহানারা ভূঁইয়া শুধু অভিনেত্রীই ছিলেন না, একাধারে গীতিকার ও নির্মাতা হিসেবেও কাজ করছেন। তারও স্বপ্ন ছিল বড়পর্দার নায়িকা হওয়ার। গীতিকার হিসেবেই তিনি প্রথম চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। এ ছাড়াও ‘নিমাই সন্ন্যাসী’ সিনেমায় প্রথম গান লেখেন। যেটি ছিল তার স্বামী চিত্রপরিচালক সিরাজুল ইসলামের। আর খলনায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরু হয় ‘সৎমা’ ছবি দিয়ে। এ পর্যন্ত তার অভিনীত সিনেমার সংখ্যা প্রায় আড়াই শতাধিক। তাঁর পরিচালিত ছবি ‘সিঁদুর নিওনা মুছে’। এখনো তিনি অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
শবনম পারভীন : ১৯৮৫ সালে ‘আগুন পানি’ ছবিতে অভিনয় করেন নায়িকার চরিত্রে। আর খলনায়িকা হিসেবে তাঁর প্রথম অভিনয় ১৯৮৬ সালে ‘শুকতারা’ ছবিতে। এ পর্যন্ত খলনায়িকা হিসেবে কাজ করেছেন প্রায় শতাধিক ছবিতে। ছোটপর্দাতেও রয়েছে তাঁর ব্যস্ততা। টিভি নাটকের পাশাপাশি হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির নাট্যাংশে নানির চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি।
নাগমা : নাগমা নব্বই দশকের চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ছিলেন। এ অভিনেত্রীর আসল নাম সালমা আক্তার লিনা। তিনি মাত্র ৪০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘খুনের বদলা’ ছবিতে প্রথম অভিনয় তাঁর। তিনি প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রে খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন।