চট্টগ্রামে চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৪১ জন, জুলাই মাসে ১৯৮ এবং আগস্ট মাসে ২০২ জন। জুলাই-আগস্ট মাসে দুজন মারা গেলেও জুনে মৃত্যু ছিল না। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের শেষে সেপ্টেম্বর মাসের গত ২৯ দিনে আক্রান্ত হন ৭৮৭ এবং মারা যান ১০ জন। বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও এভাবে দাপট দেখাচ্ছে এডিস মশা। প্রতিনিয়তই আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গু রোগে। অন্যদিকে, সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ দিনে আক্রান্ত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে চট্টগ্রাম নগরের এডিস মশা প্রজননে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এসব এলাকায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ আছে।
বর্তমানে নগরের জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকায় ডেঙ্গু রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। কারণ ফুলের টব, গাছের টব, টায়ার, বোতলে পানি জমে থাকায় এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে। একই সঙ্গে নিম্নাঞ্চলে পানি বেশি জমে থাকে বলে সেখানেও এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার এক দিনে ২৬ জন আক্রান্ত হন। এ নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে মোট আক্রান্ত হন ১ হাজার ৩৮৫। এর মধ্যে পুরুষ ৭৫৩, মহিলা ৩৬৮ ও শিশু ৩৬৪। একই সময়ে মোট মারা ১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ চার, মহিলা ৯ ও শিশু দুজন। চট্টগ্রামে ২০২৩ সালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮৭ এবং ২০২২ সালে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৪৪৫ জন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বর্ষা শেষ হয়েছে। তবুও প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত বাড়ছে। এখন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এডিস মশা প্রজননে এটিও একটি ইতিবাচক আবহাওয়া। তাই কোনো মতেই বাড়ির আশপাশে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আক্রান্ত রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে নগরের কিছু এলাকাকে এডিস মশাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে চসিককে বলা হয়েছে। তাছাড়া, আমরাও জনসচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিচ্ছি।
চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি বলেন, চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের উদ্যোগে নিয়মিতই মশকনিধন কাজ চলছে। এটি রুটিন কাজ। তাছাড়া, মশকনিধনে প্রয়োজনীয় ওষুধও আছে। বর্তমানে ফগার মেশিন আছে ১৫০টি এবং ¯ন্ডেপ্র মেশিন আছে ২৪০টির বেশি।
জানা যায়, সিভিল সার্জন কার্যালয় নগরের ২০টি এলাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি বেশি পেয়েছে। আক্রান্ত রোগীর তথ্য নিয়ে এসব এলাকাকে এডিস মশাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো- নগরের বাকলিয়া, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, খুলশী, বন্দর, হালিশহর, পতেঙ্গা, চকবাজার, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, অক্সিজেন, নাসিরাবাদ, দামপাড়া, কাট্টলি, মুরাদপুর ও চৌমুহনী। এর মধ্যে প্রথম তিনটি এলাকা ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।