এক দফা আন্দোলনে সিরাজগঞ্জ জেলা শহর, রায়গঞ্জ, হাটিকুমরুল, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে ছাত্র-জনতার সাথে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশসহ ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এরমধ্যে এনায়েতপুর থানার ১৩ জন পুলিশ সদস্য, সদরে ১জন শিক্ষার্থী, ২ জন যুবদল কর্মী ও রায়গঞ্জে ১ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা রয়েছেন। আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক।
নিহতরা হলেন সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের মাসুমপুরের মাজেদ খানের ছেলে যুবদল নেতা মুঞ্জু (৩৫), শহরের গয়লা বটতলা এলাকার গঞ্জের আলী ছেলে ইসলামীয়া কলেজের ছাত্র সুমন (২৪) এবং গয়লা ভোকেশনাল রোড এলাকার আছের আলীর ছেলে যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফ (৩৫) ও রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার লিটন (৫০), উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক আলামিন সরকার (৪০), ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (৪০), ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাইন টিটু ও খবরপত্র পত্রিকার সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিক (৬০)।
এছাড়াও সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম, ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী ও সাবেক এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বসতবাড়ী, আওয়ামী লীগ অফিস, জেলা পরিষদ কার্যালয়, রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টার, ভূমি অফিস, কোর্ট চত্ত্বরের কয়েকটি স্থাপনায় আগুন দেয়া হয়েছে।
সুত্র জানায়, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে শহরে প্রবেশ করে বাজার ষ্টেশনে জড়ো হয়। প্রথমেই মিছিলকারীরা জেলা প্রশাসক ও কোর্ট চত্বর এলাকার কয়েকটি স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে। সেখানে অবস্থিত নির্বাচন অফিস, পুলিশ সুপারের ক্যান্টিন ও ডিসি গার্ডেন ভাঙচুরসহ ত্রাণ দুর্যোগ গোডাইন ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট করে নেয়। এরপর বাজার স্টেশনের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। পর্যায়ক্রমে ছাত্র-জনতা মূল শহরে প্রবেশ করে মুজিব সড়কে সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরীর বাসভবন ও এস.এস. রোডে সাবেক এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন দিতে গেলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে মঞ্জু, সুমন ও আব্দুল লতিফ মারা যায়। অন্যদিকে, রায়গঞ্জে ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালায়। এ সময় আওয়ামী লীগ অফিসের ভিতরে থাকা ৩ জন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়াও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা ও এনায়েতপুর থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। উল্লাপাড়া আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে আগুন ও ভাংচুর, কেন্দ্রীয় যুবলীগের স্ত্রী নাহিদ সুলতানা যুথির বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন ভাংচুর, উল্লাপাড়া পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম ও উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকমল হোসেনের বাড়ি ও তেলের মিল ভাঙচুর করা হয়েছে। শাহজাদপুর সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামের বসতবাড়ি ভাঙচুর ও গাড়িসহ বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও পৌরসভার দুটি গাড়ি ভাঙচুর, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়েছে।
উপজেলা যুবদলের নেতা লুৎফর রহমান ভুইয়া শহরের মঞ্জু, সুমন ও আব্দুল লতিফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে রায়গঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আমিমুম ইহসান তৌহিদ জানান, মৃত অবস্থায় গোলম সারোয়ার লিটন, আল আমীন হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেনের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় এবং সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিক ও গোলাম হাসনাইন টিটু আহত অবস্থায় আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
বিভাগীয় অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) বিজয় বসাক জানান, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি নাম পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান বলেন, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় এখন পর্যন্ত ১২ জন পুলিশ সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার কাজ এখনো চলমান রয়েছে। তিনি জানান, আজ দুপুর ১২ টার দিকে ১২ থেকে ১৪ হাজার দুষ্কৃতিকারী থানা ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এসব দুষ্কৃতকারী হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের উপর জঙ্গি কায়দায় হামলা চালায়। থানার আরো অনেক পুলিশ সদস্যের খোঁজ পাওয়া যায়নি। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ কাজ করছে।
অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্র-জনতাসহ বিএনপি-জামায়াতের একটি মিছিল এনায়েতপুর থানার দক্ষিণ এলাকা থেকে এনায়েতপুর থানার দিকে আসতে থাকে। মিছিলটি থানার সামনে আসলে পুলিশ সদস্যরা বাঁধা দিলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এক পর্যায়ে মিছিলকারীরা বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল