গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজারে উল্লেখযোগ্য চাঙাভাব লক্ষ্য করা গেছে। গত বছরের নভেম্বর মাসের পর এটা সবচেয়ে সক্রিয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কা কেটে যাওয়ায় বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে এই গতি এসেছে। আগের মাসে যেখানে বাজারের সূচক ছিল নিম্নমুখী, সেখানে এখন মার্কিন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে সূচকগুলো পুনরুত্থান করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমে আসায় এবং ভোক্তারা কেনাকাটায় আগ্রহ দেখানোয় বাজারের এই ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। মার্কিন শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ গত সপ্তাহে ৩.৯ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে শুক্রবার সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, যা টানা চার সপ্তাহের নিম্নমুখী প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দেয়।
জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা ভবিষ্যতে সুদহার কমানোর সম্ভাবনা আরও জোরালো করেছে। ফেডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বরে সুদহার কমতে পারে, যা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ইতিবাচক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এর প্রভাব বৈশ্বিক পুঁজিবাজারেও পড়েছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন অর্থনীতির শক্তিশালী অবস্থান এবং সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা এশিয়ার পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। জাপানের পুঁজিবাজারের সূচকগুলো ২.৫ শতাংশ বেড়েছে, এবং নিক্কেই সূচক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, হংকং, তাইওয়ান, ও দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ার বাজারেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকগুলো উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা টানা ছয় দিনের ঊর্ধ্বমুখী ধারার প্রমাণ। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি মার্কিন অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের স্পষ্ট ইঙ্গিত।
ডাও ইন্ডাস্ট্রিয়াল সূচকও বৃহস্পতিবার ৫৫৪ পয়েন্ট বা ১.৪ শতাংশ বেড়েছে। এনভিডিয়া এবং অন্যান্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নাসডাক কম্পোজিট সূচক ২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন শ্রম বিভাগের তথ্যমতে, জুলাই মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতি ২.৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০২১ সালের মার্চ মাসের পর প্রথমবারের মতো তিন শতাংশের নিচে এসেছে।
ফেডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, যদি মূল্যস্ফীতি দুই শতাংশের নিচে নেমে আসে, তবে নীতি সুদহার কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের গতিও কমে আসছে, যা বাজারে কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জুলাই মাসে বেকারত্বের হার ৪.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত চার মাস ধরে বেড়েই চলেছে। এ কারণে ফেডের উপর সুদহার কমানোর চাপ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইউরোপের পুঁজিবাজারেও গত সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। মার্কিন অর্থনীতির চাঙা ভাব এবং নীতি সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। প্যারিসের সিএসি সূচক দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৭,৪৩১ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে, এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের ডিএক্স সূচক দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে লন্ডনের এফটিএসই সূচক দশমিক ১৭ শতাংশ কমে গেছে।
বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজারে এই ইতিবাচক পরিবর্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সম্ভব হয়েছে, যা আগামীতেও বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল