ভয়াবহ বন্যার ছোবলে আক্রান্ত বাংলাদেশ। উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৬ লাখ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। ১৯৮৮ সালের পর এমন প্রলয়ঙ্করী বন্যার কবলে পড়েনি দেশ। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাতে হঠাৎ করেই বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব। আগাম সতর্কতা না দিয়ে ত্রিপুরার একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ খুলে দেওয়ায় ঘটে বিপত্তি। ভারত সরকারের ভাষ্য বাঁধ খুলে দেওয়া হয়নি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় বাঁধ খুলে যায়। বন্যা দেখা দেয় ভারতের ত্রিপুরার পাশাপাশি বাংলাদেশেও। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বন্যা মোকাবিলায় দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে সংলাপের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বন্যায় ফেনী, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে। জোয়ারের পানির চাপে খুলনায় বাঁধ ভেঙে পাইকগাছায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কুমিল্লায় গোমতী নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ পানির চাপে ভেসে গেছে। চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীতেও আঘাত হেনেছে বন্যা। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বেশ কয়েকটি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। টানা ৩৬ দিনের ছাত্র আন্দোলনে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, তাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে। হঠাৎ বন্যার ছোবল মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সরকারের পক্ষে একা এই প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করা আদতেই কঠিন। ইতোমধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ দূর অতীতকাল থেকেই। ঝড়, বন্যা, টর্নেডো মোকাবিলা করেই টিকে আছে এদেশের সাহসী মানুষ। চলতি বন্যা মোকাবিলায় সে সাহস দেখাতে হবে। বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নদ-নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার।