ঋতু বৈচিত্র্যের বাংলাদেশে বিভিন্ন ঋতুতে প্রকৃতিতে দেখা দেয় ভিন্ন আবহ। ষড়ঋতুর দেশ হলেও গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীতের প্রভাবই বেশি। শীত মানে শিশিরে ভেজা সকাল। শীতকালে একসময় গ্রামের উঠোনে উঠোনে দেখা যেত আগুন পোহানোর দৃশ্য। এখনো আছে, তবে আগের মতো আর দেখা যায় না। শীত এলে পিঠা-পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। চলে ঘরে ঘরে বাহারি পিঠাপুলির আয়োজন। খেজুর রসে ভেজানো পিঠা, ধুপি পিঠা, চিতই পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা ও খেজুরের রসের পায়েস। সকালের কাঁচা রসে যে পায়েস রান্না হয় তার জুড়ি মেলা ভার। বিশেষত উত্তরের জেলাগুলোতে বইছে শীতের দাপট। ভোরের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় ঢাকা প্রকৃতি জানান দিচ্ছে হাঁড়কাপানো শীতের। খেজুরের রস থেকে তৈরি হয় গুড় ও পাটালি। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ মুগ্ধ করে। বিকালে ধারালো দা দিয়ে খেজুরগাছের সোনালি অংশ বের করে নল লাগানো হয়। গাছে ঝোলানো হয় মাটির হাঁড়ি। ভোর থেকে শুরু হয় রস সংগ্রহ। তা দিয়ে তৈরি হয় গুড় ও পাটালি। গাছ একবার ছাঁটলে অন্তত দুই দিন রস সংগ্রহ করা যায়। এরপর তিন দিন শুকাতে হয়। এভাবে কাটলে রস সুমিষ্ট হয়। শীত যত বেশি খেজুরের রস তত বেশি মিষ্টি। শীত ও খেজুরের রস যেন গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে আছে। সকালে ঠান্ডা, মিষ্টি খেজুরের রস যেন অমৃত। তবে পৌষ ও মাঘ মাসে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়, কারণ এ দুই মাসে শীতের দাপট থাকে সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়া যত ঠান্ডা থাকে রসও তত বেশি পাওয়া যায়। উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে রসও কমতে থাকে। কোমরে রশি বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করেন গাছিরা। বিকালে ছোট-বড় কলসি গাছে বাঁধা হয়, সকালে রস সংগ্রহ। কেউ কাঁচা রস এলাকার হাটবাজারে বিক্রি করেন। কেউ রস জ্বালিয়ে গুড় বানান।
এস ডি সুব্রত