অবাক শোনালেও সত্য। কুমিল্লার কোটবাড়ীতে এক খন্ড হংকং নগরীর দেখা মিলছে। সেই হংকং নগরী, যা চীনের একটি বিশেষ অঞ্চল। চীন সাগরের কোলে অবস্থিত জনপদটি অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ। সেখানে জনশক্তি রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। কুমিল্লা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হংকংয়ের আদলে ফ্ল্যাট সাজানো হয়েছে। দেখলে মনে হবে এটা বাংলাদেশের বাইরের কোনো চিত্র। এখানে সবাই হংকংয়ের ভাষায় কথা বলেন। দুর্বোধ্য হলেও সমৃদ্ধির হাতছানি তাদের কাছে তা মধুর করে তুলেছে। হংকংয়ের ক্যান্টনিজ ভাষা ও কাজ শিখে হংকং যাচ্ছেন পাহাড়ের নারীরা। তাদের পাঠানো অর্থে বদলে যাচ্ছে পাহাড়ের চিত্র। দূর হচ্ছে পাহাড়ের দরিদ্রতার অন্ধকার।
প্রথমে তারা ৮০ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করছেন। একসময় তা লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। বিভিন্ন সূত্র জানায়, হংকংয়ে সাড়ে তিন লাখ প্রশিক্ষিত গৃহকর্মীর চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গত এক দশকে দেড় হাজারের মতো জনবল রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৫০০ কর্মী কুমিল্লা কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত হয়েছেন। সরকার সুদৃষ্টি দিলে আরও বেশি নারীকে প্রশিক্ষিত করে হংকং পাঠাতে পারে। এতে সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি। সরেজমিন দেখা যায়, কুমিল্লা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভবনের তৃতীয় তলা। প্রবেশ করতেই অচেনা পরিবেশ মনে হলো। এক কক্ষে সবাই লাল টি-শার্ট পরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। দ্বিতীয় কক্ষে কাপড় ধোয়া, ইস্ত্রি করার প্রশিক্ষণ। সঙ্গে আছে শিশুদের যত্ন নেওয়ার প্রশিক্ষণ। কীভাবে কোলে নেবে। আরেক কক্ষে রোগীর প্রেশার দেখা হচ্ছে। বৃদ্ধাকে হুইলচেয়ারে নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন কেউ কেউ। তাদের ভাষা ও কাজের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ ইনচার্জ এরশাদ হোসাইন রনি, ভাষা প্রশিক্ষক সাইয়েদা তানিয়া জেনি, হোস্টেল অর্গানাইজার জ্যোতি চাকমা। প্রশিক্ষণার্থী এলিসা মগিনি এসেছেন খাগড়াছড়ি থেকে। তিনি বিপি মেশিন দিয়ে রোগীর প্রেশার দেখছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই সেন্টার থেকে তার মাসি ট্রেনিং করে হংকং গিয়েছেন। তার অনুপ্রেরণায় তিনি এখানে এসেছেন।’ এলিসা হংকংয়ের ভাষায় বললেন তার পরিবারের বৃত্তান্ত। তিনি এখানে শিখেছেন শিশু-বৃদ্ধার যত্ন, রান্না ও কুকুর পালন থেকে শুরু করে ওয়াশরুম পরিষ্কার। রাচিং মার্মা সেন্টারের রান্না ঘরে কাজ করছিলেন। তিনি হংকংয়ের মানুষ কী ধরনের খাবার পছন্দ করেন তা শিখছেন। রাবাই মার্মা শিশুর যত্ন নিচ্ছেন। একটি ডামি শিশু তার হাতে ধরা। তিনি কীভাবে মালিকের কাছ থেকে ছুটি চাইবেন, বেতন নেবেন তা শোনালেন ক্যান্টনিজ ভাষায়। হোস্টেল অর্গানাইজার জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘মেয়েরা এখানে তিন মাসের কোর্সে ভাষা ও গৃহস্থালি কাজ শেখে। তাদের হাতেকলমে কাজ শেখাতে তারা সহযোগিতা করেন। যারা ট্রেনিং করে হংকং গেছেন তারা ভালো আছেন।’ প্রশিক্ষণ ইনচার্জ এরশাদ হোসাইন রনি বলেন, ‘হংকংয়ে সাড়ে ৩ লাখ প্রশিক্ষিত গৃহকর্মী কাজ করছেন। তাদের অধিকাংশ ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের কর্মী। সেখানে আমাদের অংশগ্রহণ অনেক কম। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সেন্টারে মেয়েরা এইচএসসি পাস করে এসেছেন। এখানে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। হংকংয়ে তারা বিনামূল্যে থাকাখাওয়ার সঙ্গে প্রথমে ৮০ হাজার টাকা বেতন পাবেন। তাদের আয়ে পরিবারে সমৃদ্ধি এসেছে। তাদের পরিবার যখন আমাদের কাছে সচ্ছলতার গল্প বলে তখন আনন্দ লাগে।’ কুমিল্লা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এখানে হংকংগামীদের ট্রেনিং দেওয়া হয়। এখানে পার্বত্য অঞ্চলের মেয়েরা বেশি আসে। তারা এখানে ভাষা ও হাউস কিপিং শেখে। হংকংয়ের লোক কর্মী নিতে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়। এদিকে বিদেশ গমনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক নারীদের ঋণ দেয়।