নতুন সংবিধানের অধীনে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধান, বিচার ও সংস্কারের দাবিতে সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ‘উঠানে নতুন সংবিধান’ শীর্ষক উঠান বৈঠক কর্মসূচি পালন করছে দলটি। এ কর্মসূচি চলবে আগামীকাল পর্যন্ত। এনসিপি বলছে, এটি তাদের আন্দোলনের প্রথম ধাপ। দাবি আদায়ে প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে পরবর্তী কর্মসূচি।
দলীয় সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এনসিপি। সম্প্রতি নাহিদ ইসলাম এক বক্তব্যে বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ইস্যুতে ছাড় দিলেও জুলাই সনদের ক্ষেত্রে একবিন্দু ছাড় দেবেন না তারা। জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কারগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে সেই নতুন সংবিধানের অধীনে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন চায় এনসিপি। দলটির দাবি, এতে করে জুলাই সনদের কার্যকারিতা নিশ্চিত হবে এবং সনদে উল্লিখিত সংস্কারগুলো এই নির্বাচন থেকেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
এনসিপির প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি চাইছে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া রাজনৈতিক দল জুলাই সনদের সংবিধানসম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে ভোটাভুটির মাধ্যমে পাস করে ধাপে ধাপে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। অর্থাৎ এ পর্যন্ত ১৭টা সংশোধনী হয়েছে, তারা ক্ষমতায় গিয়ে টু-থার্ড মেজরিটি ভোটে ১৮তম সংশোধনী এনে জুলাই সনদের দুই-তিনটা প্রস্তাব সংবিধানে নিয়ে আসবে। তারপর আবার ১৯তম সংশোধনী এনে অন্য দুই-তিনটা প্রস্তাব, এভাবে ২০তম, ২১তম সংশোধনী এনে জুলাই সনদ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করবে। এই এনসিপি নেতা বলেন, ফলে আগামী নির্বাচনে যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন তাঁর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আইন প্রয়োগ হবে না। এই আইনের প্রয়োগ হবে ২০৩২ সালের নির্বাচনে। বিএনপির তারেক রহমান ২০৩২ সাল থেকে ২০৪২ সাল পর্যন্ত মোট পনেরো বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন। মূলত বাহাত্তরের সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার নাম করে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নতুন সংবিধানের অধীনে গণপরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেই জুলাই সনদের সংবিধানসম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। সংসদে উচ্চকক্ষ নিশ্চিত করা যাবে, উচ্চকক্ষে পিআর হবে, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা কার্যকর করা যাবে। তা ছাড়া নতুন সংবিধান বা গণপরিষদের জন্য জাতীয় নির্বাচন এক দিনও পেছাতে হবে না। প্রয়োজনে দুই মাস এগিয়ে এই ডিসেম্বরেই নির্বাচন করা সম্ভব। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় অনুষ্ঠিত এক উঠান বৈঠকেও একই কথা বলেছেন। গত শুক্রবার রাতের ওই বৈঠকে তিনি বলেন, ‘যে সংবিধানের দোহাই দিয়ে হাসিনা দিনের ভোট রাতে করেছে, সেই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। আমাদের প্রয়োজন নতুন একটা সংবিধান। নতুন সংবিধানের অধীনে আগামী মাসে নির্বাচন দিলেও আমাদের কোনো আপত্তি নাই।’
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচনের তোড়জোড় চলছে সেই নির্বাচন হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া রাজনৈতিক দল তাদের ইচ্ছামতো সংবিধান কাটাছেঁড়া করার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে গণপরিষদ নির্বাচন হলে জুলাই সনদের সংস্কার প্রস্তাবনার আলোকে প্রথমে সংবিধান সংশোধন করতে হবে তারপর দেশ পরিচালনার কাজ। ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে সংবিধানকে ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনে জুলাই সনদের জন্য যেসব সংস্কার প্রস্তাবনা এসেছে তা বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনসহ আরও কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চলছে। আলোচনার টেবিলে এর সমাধান না মিললে আমরা জনগণকে গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধ করব। আমরা এরই মধ্যে সারা দেশে উঠান বৈঠক কর্মসূচি শুরু করেছি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন আদায়ে আমরা এক বিন্দু ছাড় দেব না।’