সিরিয়ায় টানা ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের মধ্যেও দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা বা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি ও তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কার্যত নীরব ভূমিকা পালন করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ নীরবতা শুধু সিরিয়ার ভঙ্গুর নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে না বরং আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলছে।
জুলাই ও আগস্ট ২০২৫ থেকে অন্তত ছয়টি বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। যার মধ্যে রয়েছে বিমান হামলা, ড্রোন আক্রমণ এবং স্থল অভিযানের মতো বহুমুখী পদক্ষেপ। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্যমতে, ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে গড়ে প্রতি তিন-চার দিনে একবার করে ইসরায়েলি হামলা হয়েছে সিরিয়ার ভেতরে। শুধু তাই নয় আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে অন্তত ৪০০ স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
গত ২৭ আগস্ট দক্ষিণ দামেস্কের আল-কিসওয়া এলাকায় অবস্থিত সাবেক বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটিতে ইসরায়েলি হামলার পরও জোলানির পক্ষ থেকে কোনো দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এর পরিবর্তে, দেশটির সামরিক স্থাপনাগুলো বারবার বিমান ও কামানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব নীরবই থেকে গেছে।
অন্যদিকে, আঙ্কারায় তুর্কি পার্লামেন্টে গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিলেও সিরিয়ায় টানা আক্রমণ নিয়ে এরদোয়ান সরকারও নরম অবস্থান নিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি ছাড়া আর কোনো শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এতে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তুরস্ক ও সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নীরবতা কি কাকতালীয়, নাকি এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক সমন্বয় রয়েছে?
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় জোলানির প্রশাসন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত দুটি বৈঠক হয়েছে। তবে এসব আলোচনায় সিরিয়ার ভেতরে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ করা হয়নি। ফলে, বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাবই জোলানির নীরবতার মূল কারণ।
ইসরায়েল সবসময় দাবি করে আসছে, তাদের হামলা মূলত ইরানি প্রভাব ঠেকানো, অস্ত্র পরিবহন প্রতিরোধ বা প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপের অংশ। কিন্তু বাস্তবে গোলান মালভূমি দখল, সুয়েইদা অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা উসকে দেওয়া এবং সিরিয়ার উত্তর-পূর্বে কুর্দি মিলিশিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগই তাদের কৌশলের বড় দিক।
বিশ্লেষকদের মতে, আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার সেনাবাহিনী পুনর্গঠিত হতে পারেনি। তুর্কি উপদেষ্টাদের নির্দেশনায় নতুন সামরিক কাঠামো গড়ে উঠলেও কার্যকর প্রতিরোধ সক্ষমতা এখনও দুর্বল। তাই আঞ্চলিক বাস্তবতায় জোলানি ও এরদোয়ান উভয়েই ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে নীরবতা ও সীমিত প্রতিক্রিয়ার পথ বেছে নিয়েছেন।
সূত্র: মেহের নিউজ
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল