ঘরের মাঠে মুখ থুবড়ে পড়ল ইংল্যান্ডের ব্যাটিং। কেশাভ মহারাজ, ভিয়ান মুল্ডারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দেড়শও করতে পারল না তারা। রান তাড়ায় এইডেন মার্করামের বিস্ফোরক ইনিংসে রেকর্ড গড়া জয়ে সিরিজ শুরু করল দক্ষিণ আফ্রিকা।
হেডিংলিতে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) প্রথম ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৭ উইকেটে। স্বাগতিকদের ১৩১ রানে গুটিয়ে ১৭৫ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে সফরকারীরা। ওয়ানডেতে ঘরের বাইরে এত বেশি বল বাকি রেখে জয়ের কীর্তি নেই দক্ষিণ আফ্রিকার। আগের রেকর্ড ছিল ২০১৪ সালে বুলাওয়ায়োতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৩৬ বল আগে জয়।
বোলিংয়ে জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন মহারাজ। বাঁহাতি অভিজ্ঞ স্পিনার ২২ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। ৩৩ রানে ৩ উইকেট নেওয়া মুল্ডারের অবদানও কম নয়।
টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাটিং করে ২ ছক্কা ও ১৩ চারে ৫৫ বলে ৮৬ রান করেন মার্করাম। ইনিংসটির পথে ২৩ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকান কোনো ব্যাটসম্যানের যা দ্রুততম ফিফটি। আর সব প্রতিপক্ষ মিলিয়ে এই সংস্করণে প্রোটিয়া ওপেনারদের মধ্যে এটাই দ্রুততম ফিফটি।
মার্করামের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ডে নাম উঠে গেছে অভিষিক্ত সনি বেকারের। ৭ ওভারে ৭৬ রান দিয়েছেন তিনি, ওয়ানডে অভিষেকে ইংলিশ বোলারদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ২২ বছর বয়সী বেকার ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ১০.৮৫। ওয়ানডে অভিষেকে কমপক্ষে ৭ ওভার করা বোলারদের মধ্যে ওভারপ্রতি সবচেয়ে বেশি রান খরচ করার রেকর্ডটি এখন তার।
লিডসে এদিন টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ইংল্যান্ড। তৃতীয় ওভারে বিদায় নেন বেন ডাকেট। আত্মবিশ্বাসী শুরু করা জো রুট বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দুইজনই ধরা পড়েন কিপারের গ্লাভসে। রুটের ক্যাচ দুইবারের চেষ্টায় নেন রায়ান রিকেলটন। আরেক প্রান্তে সাবলীল ছিলেন জেমি স্মিথ। দলের রানের চাকা সচল রাখেন এই ওপেনার। তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি অধিনায়ক হ্যারি ব্রুকও। ভুল বোঝাবুঝিতে কাটা পড়েন তিনি রান আউটে।
দারুণ ব্যাটিংয়ে ৪৬ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন স্মিথ। এরপর ইনিংস টেনে নিতে পারেননি তিনি। মুল্ডারের বলে ফাইন লেগে কর্বিন বশের দারুণ ক্যাচে ফেরেন ৪৮ বলে ৫৪ রান করে। মুল্ডার, মহারাজের ছোবলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। জস বাটলার, জ্যাকব বেথেল, উইল জ্যাকসরা করতে পারেননি কিছুই। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে তাদের ব্যাটিং। ২৯ রানে শেষের ৭ উইকেট হারায় তারা।
রান তাড়ায় আগ্রাসী শুরু করেন মার্করাম। বেকারের করা প্রথম ওভারে তিনটি চার মারেন তিনি। এই পেসারের পরের ওভারে দুটি ছক্কার পাশাপাশি হাঁকান এক চার। আরেক প্রান্তে জফ্রা আর্চারকে খেলতে ভুগছিলেন রিকেলটন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন তিনি শূন্য রানে। কিন্তু বেঁচে যান স্লিপে রুটের হাতে ধরা পড়ার আগে বল মাটিতে হালকা স্পর্শ করায়। অনেকটা সময় রিপ্লে দেখে ‘নটআউট’ সিদ্ধান্ত দেন টিভি আম্পায়ার। পরের বলে এলবিডব্লিউ হতেন তিনি, যদি রিভিউ নিত ইংল্যান্ড!
পঞ্চম ওভারে বেকারকে চার মেরে ১১তম বলে রানের খাতা খোলেন রিকেলটন। ওই ওভারে আরেকটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। সদ্য সমাপ্ত দা হান্ড্রেডে আলো ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার দিন যেন নিজেকে খুঁজে ফিরছিলেন বেকার। সপ্তম ওভারে তাকে ৩টি চার মেরে পঞ্চাশে পা রাখেন মার্করাম। পরে কিছুটা মন্থর হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার রানের গতি। পাওয়ার প্লের শেষ তিন ওভারে কেবল ৫ রান করতে পারে। ৬৭ রান নিয়ে শেষ করে প্রথম ১০ ওভার।
একটা সময় মনে হচ্ছিল মার্করাম ও রিকেলটনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতেই কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু জয় যখন ১১ রান দূরে, আদিল রাশিদের বলে কাভার-পয়েন্টে স্মিথের চোখধাঁধানো ক্যাচে বিদায় নেন মার্করাম।
একেবারে শেষে এসে অহেতুক দুই উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জিততে যখন প্রয়োজন এক রান, রাশিদকে ছক্কার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টেম্বা বাভুমা। পরের বলে রিভার্স সুইপ করে বোল্ড ট্রিস্টান স্টাবস। এক বল পর বিশাল ছক্কায় দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস। ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে ৪টি চারে ৫৯ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত থাকেন ওপেনার রিকেলটন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২৪.৩ ওভারে ১৩১ (স্মিথ ৫৪, ডাকেট ৫, রুট ১৪, ব্রুক ১২, বাটলার ১৫, বেথেল ১, জ্যাকস ৭, কার্স ৩*, আর্চার ০, রাশিদ ৯, বেকার ০; বার্গার ৪-০-২৮-১, এনগিডি ৫-০-২০-১, বশ ৩-০-২১-০, মুল্ডার ৭-০-৩৩-৩, মহারাজ ৫.৩-০-২২-৪)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০.৫ ওভারে ১৩৭/৩ (মার্করাম ৮৬, রিকেলটন ৩১, বাভুমা ৬, স্টাবস ০, ব্রেভিস ৬*; বেকার ৭-০-৭৬-০, আর্চার ৫-১-৮-০, কার্স ৫-০-২৪-০, রাশিদ ৩.৫-০-২৬-৩)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: কেশাভ মহারাজ।
সিরিজ: ৩ ওয়ানডের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে প্রোটিয়ারা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ