গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলাজুড়ে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অজানা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বিভিন্ন সড়কে রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ডসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল। সব মিলিয়ে ঘটনার তৃতীয় দিনেও গোপালগঞ্জে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে গোপালগঞ্জ কাশিয়ানি থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ৭০ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামী করা হয়েছে। কোটালিপাড়া থানায় এস আই উত্তম কুমার সেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ১৫৫ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ১৫০০ জনকে আসামী করা হয়েছে। অন্যদিকে গোপালগঞ্জ শহরের থানাপাড়া এলাকার গুলিবিদ্ধ রিকশাচালক রমজান মুন্সি মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই জামাল মুন্সি। গতকাল তিনি বলেন, ১৬ জুলাই দুপুরে রমজান শহরের সিনেমা হলের পেছনের সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার রাতে রমজান মারা যায়। জানা গেছে, এ নিয়ে গোপালগঞ্জে মৃতের সংখ্যা পাঁচজনে পৌঁছাল। নিহতরা হলেন- জেলা শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহা (২৫), শহরের থানাপাড়ার কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (২৪), সদর উপজেলার আড়পাড়া এলাকার আজাদ তালুকদারের ছেলে ইমন তালুকদার (১৮), টুঙ্গিপাড়ার সোহেল রানা মোল্লা (৩৫) এবং রিকশাচালক রমজান মুন্সি (৩৫)। এরা সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। গোপালগঞ্জে কারফিউ থাকলেও গতকাল সকাল থেকে সড়কে মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ ছিল। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান পাড়ামহল্লায় খোলা রয়েছে। এদিকে গোপালগঞ্জ সদর থানার সামনে গতকাল সকাল থেকে গ্রেপ্তারদের স্বজনদের ভিড় করতে দেখা গেছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ পরিদর্শন করেছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী জানান, গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কারফিউর সময় বাড়ানো হয়েছিল। এরপর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জনগণের জন্য কারফিউ শিথিল রাখা হয় এবং দুপুর ২টা থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারফিউ থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান এক আদেশে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউর সময় বর্ধিত করেছেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, ১৬ জুলাই সদর উপজেলার উলপুর টু দুর্গাপুরগামী মান্নান শেখের স-মিলের পশ্চিম পাশে পাকা রাস্তায় পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৪৫০ জনকে আসামি করে পুলিশ পরিদর্শক আহমেদ আলী বিশ্বাস বাদী হয়ে ১৭ জুলাই রাতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেছেন। এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। চলছে যৌথ বাহিনীর অভিযান। এ পর্যন্ত ১৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছে সদর থানায় ৪৫ জন, মুকসুদপুর থানায় ৬৬ জন, কাশিয়ানী থানায় ২৪ জন, টুঙ্গিপাড়া থানায় ১৭ জন এবং কোটালীপাড়া থানায় ১২ জন। পরে গ্রেপ্তারদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ জানান, গোপালগঞ্জে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান চলছে। নদীপথে টহল জোরদার করেছে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। তিনি বলেন, সম্প্রতি গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর সংঘটিত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। এ ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে দুষ্কৃতকারীরা নদীপথ ব্যবহার করে যেন পালিয়ে যেতে না পারে, সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে গোপালগঞ্জ জেলার নদীপথে বিশেষ টহল পরিচালনা করছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা দিনরাত টহল চালিয়ে যাচ্ছে। সন্দেহভাজন নৌযানসমূহে তল্লাশি, যাত্রী পরিচয় যাচাই ও সন্দেহভাজন গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।