কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে গতকাল দেশব্যাপী এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ শোক দিবস পালন করা হয়। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া দেশের সব মসজিদে দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা হয়, মন্দির-গির্জা-প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। সরকারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরাও শোক পালন করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সচিবালয়ে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, সব কর্মকর্তা-কর্মচারীই কালো ব্যাজ ধারণ করে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি সচিবালয়ের ফটকে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও পোশাকে কালো ব্যাজ পরেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ৯টা থেকে অফিস শুরু হয়েছে। সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সবার জন্য দর্শনীয় জায়গায় কালো ব্যাজ রাখা হয়েছিল। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাজ পরেই তাদের কার্যক্রম শুরু করেন।
সচিবালয়ের মূল ফটকে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ কর্মকর্তা মো. মাইনুদ্দিন। তিনি জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা সকাল থেকেই কালো ব্যাজ ধারণ করে দায়িত্ব পালন করছি।
বাণিজ্য সচিব মো. সেলিম উদ্দিন জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিহতদের স্মরণে দিনব্যাপী শোক পালন চলছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সচিবালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী কালো ব্যাজ ধারণ করে দায়িত্ব পালন করছেন। আজ (গতকাল) অফিস চলবে বেলা ৩টা পর্যন্ত। তবে আমরা দিনের পুরোটা সময়ই এ কালো ব্যাজ ধারণ করে কর্মসূচিতে একাত্ম থাকব। সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনের নিচে ক্যান্টিনে কথা হয় শ্রম মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মচারীর সঙ্গে। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কালো ব্যাজ একটা আনুষ্ঠানিকতা। আমাদের মনে অনেক কষ্ট। এত সম্পদের ক্ষয় হয়ে গেল। এত মানুষের প্রাণহানি ঘটল। এ দেখে যে কারও মন খারাপ হবে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আমরা কালো ব্যাজ ধারণ করেছি। সাম্প্রতিক এ ঘটনায় অনেক প্রাণহানি হয়েছে। আমাদের ছোট অর্থনীতির দেশ। অর্থনীতিতে বড় আঘাত এসেছে। এগুলো কারোরই কাম্য ছিল না। আমরা চাই দেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। দেশের উন্নয়নে অনেক কাজ এখনো বাকি।
এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে মন্ত্রিসভার সদস্যদের পাশাপাশি সব মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন। ওইদিন বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। গত রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাম্প্রতিক সহিংসতায় ১৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য জানান। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রবিবার ১৪৭ জনের মৃত্যুর কথা বলেছিলেন, আরও তিনজন যোগ হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা ১৫০। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্য অনুযায়ী, নিহতের এ সংখ্যা ২ শতাধিক।