জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। কিন্তু দলটি তাদের অর্জন ধরে রাখতে পারেনি। তিনি বলেছেন, জনগণ আওয়ামী লীগকে কীভাবে দেখে, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আওয়ামী লীগ নিজেদের কীভাবে দেখে। গতকাল রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএমসিএবি)-এর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির এ কথা বলেন। শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করে লক্ষ্মণ সেনের মতো দেশ ত্যাগ করা উনার জন্য মানানসই হয়নি। জামায়াত নেতারা কখনো দেশ ত্যাগ করেননি। তাঁরা মোকাবিলা করেছেন। আমাদের নেতারা জেলজুলুম বুকে ধারণ করে দেশেই ছিলেন। কখনো দেশ ত্যাগ করেননি।’ এই মুহূর্তে জামায়াত কী করছে, এ প্রশ্নের জবাবে দলটির আমির শফিকুর রহমান বলেন, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। একজন প্রধান বিচারপতিকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। দেশে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। পুলিশ বাহিনী জনগণের বন্ধু না হয়ে শত্রুতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে। দেশকে সংস্কার করতে হবে। এই মুহূর্তে জামায়াতের প্রধান কাজ হলো ছাত্র-জনতার বিপ্লবে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহতদের পাশে দাঁড়ানো।
আইএমসিএবি-এর সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠান নিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দলের আমির বলেছেন, তাঁরা চান দেশে দ্রুত শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসুক। দেশের সংবিধান, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার হওয়া দরকার। দল বা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন করা যাবে না। তাঁরা প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। জামায়াত দল হিসেবে সবার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ প্রসঙ্গে তাঁর দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘দেশের কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে আমাদের অপবাদ দেওয়া হতো। এমনকি গাইবান্ধায় যখন একজন সংসদ সদস্য নিহত হলেন, তখন সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী এই হত্যার জন্য জামায়াতকে দায়ী করলেন। পরে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, জামায়াত সব সময় গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছে। জামায়াতের দুজন মন্ত্রী সরকার পরিচালনায় ছিলেন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি কখনো তাঁদের স্পর্শ করেনি। মানুষের দুঃখ-মসিবতে পাশে দাঁড়িয়েছে। জামায়াত কখনো ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িত ছিল না, এখনো নেই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জন্য দায়ী করে ১ আগস্ট তৎকালীন সরকার অন্যায়ভাবে নির্বাহী আদেশবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, যা দল হিসেবে জামায়াতের ওপর বড় জুলুম। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএমসিএবি)-এর প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন বাসুদেব ধর, প্রদীপ্ত নারায়ণ, ফরিদ হোসেন, রাজিব খান, কুদ্দুস আফ্রাদ, মাসুম বিল্লাহ, মিজানুর রহমান, রাশেদুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, আবু আলী, আমিনুল হক ভূঁইয়া, সিয়াম সরোয়ার জামিল, কাউসার আযম, তারিকুল ইসলাম, রাজীব খান, শাহীন পারভেজ, জাকির হোসেন, মো. মনির হোসেন প্রমুখ।