ডেঙ্গুর মরণ কামড়ে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। অক্টোবরে আগ্রাসী রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। চলতি মাসের ১১ দিনেই মারা গেছেন ৩৮ জন। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে প্রাণ হারিয়েছেন ২০১ জন, আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০ হাজার ৮৯৫ জন। প্রতিবছর ডেঙ্গু জ্বরে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু সংক্রমণের যে চিত্র আমরা দেখছি তা দেখে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে অবস্থা খারাপ। অক্টোবরেও ডেঙ্গু আমাদের ভোগাবে। এখন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটা জোরদার করা দরকার। বৃষ্টি মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করবে। সম্ভাব্য সব প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। হটস্পট ম্যানেজমেন্ট, সংক্রমণ ছড়ায়নি এমন জায়গায় মশার লার্ভা যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বর্জ্যব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। এটি নিশ্চিত করা গেলে রোগী কমে আসবে। জানা যায়, ২০০০ সালে দেশে প্রথম বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর পর থেকে প্রতিবছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল। ব্যতিক্রম ছিল ২০২০ সাল। এ বছর করোনা মহামারি দেখা দেয়। দেশে ডেঙ্গু রোগী ছিল কম, সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যু ছিল না। তখন জনস্বাস্থ্যবিদদের একটি অংশ এ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, একই সময়ে দুটি ভাইরাস সমান সক্রিয় থাকতে পারে না। করোনার জীবাণুর তীব্রতায় ডেঙ্গু ভাইরাস অনেকটা ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। করোনা মহামারি শেষ না হতেই ২০২১ সাল থেকে আবার ডেঙ্গু বাড়তে থাকে।
২০২৩ সালজুড়েই দেশবাসীকে ভুগিয়েছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৯০ জন, মারা গেছেন ২ জন। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ২২৫ জন। এ ছাড়া বরিশালে ২৭ জন, চট্টগ্রামে ৫৯ জন, ঢাকা বিভাগে ১২২ জন, খুলনায় ৩৫ জন, ময়মনসিংহে ১৬ জন, রংপুরে ছয়জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
গত দুই বছরের মতো এবারও মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুর ডেন-২ সেরোটাইপ বা ধরনে। তবে গত দুই বছর ঢাকাসহ দেশের মানুষ এই ডেন-২ সেরোটাইপে আক্তান্ত হওয়ায় তাদের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউিট (আইইডিসিআর) এ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫০ জন রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করেছে। এ পরীক্ষায় দেখা যায়, ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গু রোগীর ধরন ছিল ডেন-২।