লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে বিমান হামলায় হত্যা করার দাবি করেছে ইসরায়েল। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি হিজবুল্লাহ। তবে ফরাসি গণমাধ্যম এএফপি হিজবুল্লাহর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে জানিয়েছেন, শুক্রবার থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন নাসরুল্লাহ। তার সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
হাসান নাসরুল্লাহর উত্থান
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর বর্তমান বয়স ৬৪ বছর। তার জন্ম ১৯৬০ সালে। তিনি বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের বুর্জ হামুদ এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। তার বাবা আবদুল করিম ছিলেন সবজি বিক্রেতা। ৯ সন্তানের মধ্যে নাসরুল্লাহ ছিলেন সবার বড়।
১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে। হাসান নাসরুল্লাহ যোগ দেন শিয়া মুভমেন্ট ‘আমাল’-এ। এরপর কিছুকাল ইরাকের নাজাফে শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাটান তিনি। ১৯৮২ সালে আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আমাল থেকে বেরিয়ে যান নাসরুল্লাহ।
আমাল থেকে দলছুট হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক আমাল’। ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সহায়তায় সামরিক ও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয় দলটি। একপর্যায়ে এই দলটিই আত্মপ্রকাশ করে সশস্ত্র হিজবুল্লাহ হিসেবে।
১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশে হিজবুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে ‘ইসলামের প্রধান দুই শত্রু’ হিসেবে আখ্যা দেয়। সেই সঙ্গে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার ডাকও আসে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে।
নাসরুল্লাহ ধীরে ধীরে হিজবুল্লাহর যোদ্ধা থেকে বালবেক এলাকার পরিচালক হন। পরে পুরো বেকা ভ্যালির দায়িত্ব পান তিনি। এরপর সংগঠনের বৈরুত শাখার দায়িত্ব নেন।
যেভাবে হিজবুল্লাহ প্রধান হলেন নাসরুল্লাহ
১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন নাসরুল্লাহ। এর আগে ইসরায়েলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তাঁর পূর্বসূরি আব্বাস আল–মুসাবি।
নাসরুল্লাহ লেবাননের দক্ষিণে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গেও তার যোদ্ধাদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। একপর্যায়ে ২০০০ সালে সেখান থেকে পিছু হটে দেশে ফিরে যান ইসরায়েলি সেনারা। তবে নাসরুল্লাহর ব্যক্তিগত ক্ষতিও কম হয়নি। ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ দিতে হয় তার বড় ছেলে হাদিকে।
২০০৬ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর মধ্যকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত ছিল। তবে ওই বছর হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ইসরায়েল সীমান্তে হামলা চালালে আট সেনা নিহত ও দুজন অপহৃত হন। পরে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে যুদ্ধবিমান থেকে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রায় চার হাজার রকেট ছুড়ে জবাব দেয়।
৩৪ দিন ধরে চলা ওই লড়াইয়ে অন্তত ১ হাজার ১২৫ লেবাননি নিহত হন, যাদের বেশির ভাগ ছিলেন বেসামরিক লোক। নিহত হন ১১৯ ইসরায়েলি সেনা ও ইসরায়েলের ৪৫ বেসামরিক নাগরিকও। লড়াই চলাকালে ইসরায়েল নাসরুল্লাহর বাড়ি ও অফিসে যুদ্ধবিমান থেকে গোলাবর্ষণ করে। তবে তিনি অক্ষত থাকেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল