ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার নতুন শর্তাবলী প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। কাতারে ইসরায়েলের সঙ্গে দুদিনের আলোচনার পর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির নতুন এ প্রস্তাব উত্থাপন করলে হামাস তা প্রত্যাখ্যান করে।
গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলার প্রেক্ষিতে তা বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ তীব্র হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় আমরা এখন যুদ্ধবিরতির অনেক কাছাকাছি। চলতি বছরের মে মাসে বাইডেন যুদ্ধবিরতির যে রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন তা মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু গত কয়েক মাসের আলোচনাতেও যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে বিস্তারিত কিছু তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। এদিকে, যুদ্ধবিরতিতে হামাসকে যেসব শর্ত অন্তর্ভুক্ত করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে তা হলো মিসর সীমান্ত বরাবর গাজায় ইসরায়েলি সৈন্যের উপস্থিতি, ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তেল আবিবের ভেটো দেওয়ার অধিকার ও কিছু বন্দিকে গাজায় ফেরত না পাঠিয়ে বরং অন্যত্র নির্বাসন দেওয়া। কিন্তু হামাস এসব শর্ত দেওয়ার পরপরই এসব শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী মেনে নিতে হামাসকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মধ্যেই ইসরায়েল গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। গত ৭ অক্টোবর শুরু করা এ হামলায় এ পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আবারও আশাবাদী বাইডেন : গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে ‘আশাবাদী’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দোহায় মধ্যস্থতাকারীদের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার পর শুক্রবার তিনি এ আশাবাদের কথা জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। বাইডেন বলেন, ‘আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে (চুক্তি বাস্তবায়নে) আমরা কাছাকাছি পৌঁছেছি।’ বাইডেন আরও বলেন, চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে জোরালো প্রচেষ্টা’ বজায় রাখতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে ইসরায়েলে পাঠানো হবে। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ হত্যাকান্ডকে ঘিরে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার বিষয়ে বাইডেন বলেন, ‘আঞ্চলিক কোনো পক্ষেরই চুক্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়।’ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর যৌথ বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিমুক্তি নিশ্চিত করতে একটি প্রস্তাব পেশ করে। এর মাধ্যমে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মতপার্থক্য কমবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। বৈঠক সম্পর্কে মধ্যস্থতাকারীরা বলেছেন, গত দুই দিনে যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক’ আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় ইতিবাচক আবহ বজায় ছিল।
বাইডেন আগেও একাধিকবার চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তবে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আর যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ না করে জিম্মি মুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টাকে ইসরায়েল স্বাগত জানিয়েছে। মিসরের কায়রোয় আগামী সপ্তাহে আবার বৈঠক হবে। এএফপি