জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় যা ঘটছে তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তার ফোন ধরেননি বলে জানান গুতেরেস। বুধবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
গাজায় প্রায় ৩০০ ত্রাণকর্মী মারা গেছেন, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি জাতিসংঘের কর্মী বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গাজায় নিহত জাতিসংঘের কর্মী ও অন্য ত্রাণকর্মীদের হত্যার ঘটনায় জবাবদিহির অভাবও ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন গুতেরেস। সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের মহাসচিব মন্তব্য করেছেন, গাজায় যা ঘটছে তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। গাজায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ‘অত্যন্ত নাটকীয় লঙ্ঘন ঘটছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
গাজায় এখন পর্যন্ত ৪১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিশোধ বিষয়ে গুতেরেস বলেন, সেখানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অত্যন্ত নাটকীয় লঙ্ঘন ঘটছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়টি সেখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতির ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করে। গাজায় নিহতদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ হামাস সদস্য বলে দাবি করে তারা। হামাস সাধারণ নাগরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিন। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর নেতানিয়াহুর সঙ্গে গুতেরেসের কথা না হওয়া প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, আমি তার সঙ্গে কথা বলিনি কারণ তিনি আমার ফোন ধরেননি।
দুই সপ্তাহ পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের সময় নেতানিয়াহু তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি আছেন বলেও জানান গুতেরেস। শুধু গাজা নয়, বর্তমান বিশ্ব অবস্থাকে ‘বিশৃঙ্খল’ বলে আখ্যায়িত করেন গুতেরেস। তিনি বলেন, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় জাতিসংঘের ছয় কর্মীসহ নিহত ১৮ : ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় শরণার্থী শিবিরে রূপান্তরিত জাতিসংঘ পরিচালিত আরেকটি স্কুলে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, এতে ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র ছয় কর্মীসহ অন্তত ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-জাওনি স্কুলে বুধবারের এ হামলার সময় বিস্ফোরণের ধাক্কায় নারী ও শিশুরা টুকরা টুকরা হয়ে যান। ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, গাজার ১১ মাসের যুদ্ধে এক ঘটনায় তাদের ‘সবচেয়ে বেশি কর্মী নিহত’ হয়েছেন এ হামলায়। ইউএনআরডব্লিউএ’র তথ্য অনুযায়ী, স্কুলটিতে প্রায় ১২ হাজার উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। স্কুল ভবনটিতে ইসরায়েলি বাহিনী আকাশপথে দুবার হামলা চালায়। আলজাজিরা জানিয়েছে, আশ্রয় শিবিরটি জাতিসংঘ পরিচালনা করত আর নিহতদের মধ্যে তাদের ব্যবস্থাপকও আছেন। ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, গত অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো স্কুলটিতে হামলা চালানো হলো। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ করা পোস্টে তারা লিখেছে, ‘গাজায় কেউ নিরাপদ না। কেই রেহাই পাচ্ছে না।’ ঘটনাস্থল থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক জানান, স্কুলটিতে ‘ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ’ চালানো হয়েছে। সেখানে বাতাসে রক্তের গন্ধ ভেসে আসছে। পুরো এলাকাটি ধ্বংসস্তূপ ও আবর্জনায় ভরে আছে।