ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খলিল আল-হায়া যুদ্ধে তাদের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছেন। তবে বলেছেন, সিনওয়ারের মৃত্যুতে দল কেবল আরও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হবে। ফিলিস্তিনি জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য হামাস তাদের নিজস্ব পথেই চলবে বলে জানান তিনি।
হামাসের এই কর্মকর্তা বলেন, গাজায় যুদ্ধ শেষ না হওয়া এবং ইসরায়েলি সেনারা পুরোপুরি গাজা ছেড়ে চলে না যাওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত দেওয়া হবে না। হামাসের গাজা অঞ্চলের প্রধান খালিল আল হায়া গতকাল টিভিতে সম্প্রচারিত এক ভাষণে বলেছেন, প্রিয় নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের শাহাদাতে গোটা মুসলিম উম্মাহ ও আরব জাতির প্রতি অভিনন্দন ও সমবেদনা জানাচ্ছি।
এদিকে সিনওয়ার হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত ছিল না বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। তবে মার্কিন প্রশাসন বলছে, সিনওয়ারের মৃত্যুতে গাজায় কাক্সিক্ষত যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা সহজ হতে পারে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচে আদ্রি গাজা উপত্যকায় সিনওয়ারকে হত্যার ঘোষণা দেওয়ার পর পেন্টাগনের কাছ থেকে এ মন্তব্য এলো। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১২ জানিয়েছে, বুধবার গাজার রাফার একটি ভবনে হামাসের কয়েকজন যোদ্ধাকে প্রবেশ করতে দেখে ইসরায়েলি সেনারা। এরপর সেখানে হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। হামলার পর সেনারা সেখানে যাওয়ার পর সিনওয়ারের মতো দেখতে এক যোদ্ধাসহ মোট তিনজনের লাশ পায় তারা। এরপর বৃহস্পতিবার নিশ্চিত হওয়া গেছে ওই লাশটি সিনওয়ারেরই ছিল। সিনওয়ার ২০১৭ সাল থেকে গাজায় পলিটিক্যাল প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়াকে ইসরায়েলের বড় সাফল্য বলে মনে করছেন বিশ্ব নেতারা। পাশাপাশি গাজায় যুদ্ধ অবসানের পথ খুলবে বলেও প্রত্যাশা তাদের।
যুক্তরাজ্য : যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের নেতা’ এবং ‘হলোকাস্টের পর ইহুদিদের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিনের নেপথ্যের হোতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তযুক্তরাষ্ট্র : বাইডেন বলেন, ‘আজকে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের জন্য এটি একটি শুভ দিন। ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ায় গাজার বুকে হামাসের ক্ষমতার অবসান ঘটবে বলে আশা করি। ফলে বিশ্বে একটি রাজনৈতিক মীমাংসার সুযোগ তৈরি হবে। ওদিকে, উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে নির্বাচনি প্রচারের সময় কমলা হ্যারিস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ন্যায়বিচার হয়েছে’।
ফ্রান্স : ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও এ ঘটনাকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য বড় সাফল্য বলে মনে করেন।
ড্রোনের ক্যামেরায় সিনওয়ারের শেষ মুহূর্তের ছবি : ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারা একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করেছেন যেখানে হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের শেষ মুহূর্ত দেখা গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ভিডিওতে সিনওয়ারকে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত অ্যাপার্টমেন্টের সোফায় একা বসে থাকতে দেখা যায়, তার মাথা এবং মুখ একটি স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা। বিল্ডিংয়ের দেয়ালগুলো গোলাবর্ষণে উড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে এবং সিনওয়ারকে একটি ধুলোয় ঢাকা চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে, তার ডান হাত গুরুতরভাবে আহত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। এক পর্যায়ে, ফুটেজে দেখা যায় সিনওয়ার ড্রোনের দিকে একটি লাঠি ছুড়ে মারছেন। বলা হচ্ছে, সেনারা তিনজন সন্দেহভাজন কয়েকজনকে বিল্ডিংগুলোর মধ্যে চলাফেরা করতে দেখে গুলি চালায়, যার ফলে গুলিবিনিময় শুরু হয় এবং সিনওয়ার একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বিল্ডিংয়ে পালিয়ে যান।
ইসরায়েলের গণমাধ্যমের বিবরণ অনুযায়ী, পরবর্তী সময়ে ভবনটি লক্ষ্য করে ট্যাংক দিয়ে একাধিক গোলা ছোড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ছাড়া তারা একটি ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়ে। পরে ইসরায়েলি বাহিনী তাঁকে নির্মূল করে।