জীবন-জীবিকার প্রশস্তি সবারই কাম্য। পার্থিব জীবনের এই প্রয়োজনকে ইসলাম অস্বীকার করে না। পবিত্র কোরআনে উন্নত ও প্রশস্ত জীবন-জীবিকা লাভের কিছু উপায় বর্ণনা করা হয়েছে। নিচে তা বর্ণনা করা হলো।
১. আল্লাহভীতি : দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর ভয় ধারণ করলে আল্লাহ জীবন ও জীবিকায় প্রশস্তি দান করেন। আল্লাহকে ভয় করার অর্থ হলো আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলা, পাপ পরিহার করা ইত্যাদি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে দান করবেন জীবিকা।
যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’
(সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)
২. নামাজ আদায় : নামাজ ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম। প্রত্যেক সাবালক নর-নারীর জন্য নামাজ ফরজ। যত্ন, মমতা ও নিয়ম রক্ষা করে নামাজ আদায়কারীর জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমার পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ দাও এবং তাতে অবিচল থাক, আমি তোমার কাছে কোনো জীবনোপকরণ চাই না; আমিই তোমাকে জীবনোপকরণ দিই এবং শুভ পরিণাম আল্লাহভীরুদের জন্য।’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ১৩২)
৩. ক্ষমা প্রার্থনা করা : উত্তম জীবিকা ও বরকত লাভের অন্যতম উপায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। ক্ষমা প্রার্থনার অর্থ শুধু মুখে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া নয়, বরং এর অর্থ হলো অতীত পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, তা ছেড়ে দেওয়া এবং পাপমুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কোরো, তিনি মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন।
তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)
৪. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা : আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম ও প্রশস্ত জীবিকা লাভের একটি মাধ্যম হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অর্থ ব্যয় করা। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘বোলো, আমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা জীবিকা বর্ধিত করেন এবং যার প্রতি ইচ্ছা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার প্রতিদান তিনি দেবেন। তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ২৯)
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানব সন্তান! তুমি ব্যয় করো, আমি তোমার জন্য ব্যয় করব।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩৫২)
৫. আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা : মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখলে আল্লাহ জীবন-জীবিকায় স্বস্তি দান করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে দান করবেন জীবিকা। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)
হাদিসে এসেছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহর ওপর যথাযথ নির্ভর করো, তবে তিনি তোমাদের পাখির মতো জীবিকা দান করবেন। যে খালি পেটে সকালে বের হয় এবং ভরা পেটে রাতে ফেরে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৬৪)
৬. যথাসাধ্য পরিশ্রম করা : উত্তম জীবিকা লাভের জন্য উল্লিখিত উপায়গুলোর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের যথাযথ শ্রম করাও আবশ্যক। এ জন্য প্রসূতি মা মারিয়াম (আ.)-কে খেজুরগাছের কাণ্ড ধরে নাড়াতে বলা হয়েছে। কেননা এতটুকু তাঁর সাধ্যের মধ্যে ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার দিকে খেজুরগাছের কাণ্ডে নাড়া দাও, তা তোমাকে সুপক্ব তাজা খেজুর দান করবে। সুতরাং আহার করো, পান করো ও চক্ষু জুড়াও।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ২৫-২৬)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন