রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম পাহাড়তলী কারখানা ও সেইল ডিপোতে পুকুরচুরি হয়েছে। কারখানা ও ডিপোতে আসা স্ক্র্যাপ লোহা সরকারি লেজারে উল্লেখ না করে এবং নতুন মালামাল ‘পুরাতন হিসেবে’ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে কালো বাজারে। এভাবে গত ছয় বছরে শত কোটি টাকা একটি সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে স্ক্র্যাপের ওজন কারসাজি ও নতুন মাল বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল ইসলাম জানান- ‘চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটির উপস্থিতিতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্ক্র্যাপ বিক্রি করা হয়। এখানে অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।’ স্ক্র্যাপ বিক্রির জন্য গঠিত কমিটির অন্যতম সদস্য ডিসিওএস নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চাইলেও এককভাবে স্ক্র্যাপ লোহা বিক্রি করতে পারি না। স্ক্র্যাপ বিক্রির সময় কমিটির সদস্যরা ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও থাকেন। তাই চাইলেও আমি দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারব না।’
স্ক্র্যাপ বিক্রির জন্য গঠিত কমিটির আরেক সদস্য পুরাতন সেইল ডিপো ইনচার্জ গোলাম রাব্বানী মোবাইলে ফোন এবং ক্ষুদ্র বার্তা দেওয়া হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- ডিপোতে আসার আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তর অনুমানের ভিত্তিতে স্ক্র্যাপের অ্যাডভাইজ নোট তৈরি করে। আর ইস্যুনোট তৈরি হয় স্কেলে পরিমাপ করার পর। ডিজিটাল মেশিনে ওজন করার পর ওয়েট বিল তৈরিরও নিয়ম রয়েছে। অথচ গত তিন বছরে তৈরি করা অ্যাডভাইজ নোট এবং ইস্যু নোটে মালামালের পরিমাণ সমান। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন- অনুমাননির্ভর স্ক্র্যাপের পরিমাপ এবং স্কেলের পরিমাপ সমান হয় কীভাবে?
জানা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মেয়াদোত্তীর্ণ রেলের বগি, স্লিপার, চাকাসহ নানান ধরনের লোহা ক্র্যাপ হিসেবে পাহাড়তলীর ডিপোতে আনা হয়। ডিপোতে আনার আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তর অনুমানের ভিত্তিতে একটি ‘অ্যাডভাইজ নোট’ তৈরি করে। ডিপোতে আসার পর চার সদস্য বিশিষ্ট ‘ডেলিভারি কমিটি’ স্ক্র্যাপ লোহা বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে ওজন করে ‘ইস্যু নোট’ এবং ‘ওয়েট বিল’ তৈরির নিয়ম রয়েছে। স্ক্র্যাপের ওজন সঠিক পরিমাপের জন্য ২০১৮ সালে ডিজিটাল মেশিনও ক্রয় করে রেলওয়ে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, স্ক্র্যাপ লোহা বিক্রির আগে ডিজিটাল মেশিনে ওজন করার কথা থাকলেও ডিজিটাল মেশিনটি এক বারের জন্যও ব্যবহার করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে- স্ক্র্যাপ লোহার ওজন কারসাজিতে পাহাড়তলী ডিপোতে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটটি বছরে গড়ে অবৈধভাবে পাঁচ হাজার টনের অধিক স্ক্র্যাপ লোহা বিক্রি করেছে কালো বাজারে। গত ছয় বছরে তারা বিক্রি করেছে কমপক্ষে ৩০ হাজার টন লোহা। নতুন মালামাল পুরাতন হিসেবে বিক্রি করেছে কয়েশ কোটি টাকার। এভাবে সিন্ডিকেটটি আত্মস্যাৎ করেছে শত কোটি টাকা।