সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাটিংয়ে আরিফুল বোলিংয়ে জায়েদ

রাশেদুর রহমান

ব্যাটিংয়ে আরিফুল বোলিংয়ে জায়েদ

উইকেট পাওয়ার পর উল্লাসে মাতলেন খুলনা টাইটানসের আবু জায়েদ রাহি। গতকাল চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে চার ওভারে ৩৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে দলের দ্বিতীয় জয় নিশ্চিত করেন। তরুণ এই ক্রিকেটারের হাতে ম্যাচসেরা পুরস্কারও উঠেছে —রোহেত রাজীব

শম্বুক গতিতে ছুটে চলেছে খুলনা টাইটানস! দেখে মনে হয় গন্তব্যহীন পথচলা। ইনিংসের ১৫ ওভার পর খুলনা টাইটানসের ঝুলিতে তখন ১০১/৪। এমন তো ওয়ানডে ক্রিকেটে হরহামেশাই হয়। এর মধ্যে টি-২০’র মেজাজ কোথায়? মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কয়েক হাজার দর্শক রোদের উত্তাপ পেলেও ম্যাচের উত্তাপ থেকে বঞ্চিত। প্রথম ইনিংসেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে বলে ধরে নিচ্ছেন কেউ কেউ। হাতে থাকা ৫ ওভারে আর কতই বা হতে পারে! কিন্তু ম্যাচের আবহ বদলে দিলেন খুলনার আরিফুল হক। প্রথম ১৫ বলে ১৩ রান করা এই ব্যাটসম্যান পরের ১০ বলে করলেন ২৭ রান! আর খুলনা টাইটানস শেষ পাঁচ ওভারে যোগ করল ৬৯ রান! সবমিলিয়ে ১৭০। টি-২০ ক্রিকেটে উপযুক্ত রসদই বটে! লড়াইয়ের রসদকে পুঁজি করে শেষ পর্যন্ত ১৮ রানে ম্যাচ জিতে হাসতে হাসতে মাঠ ছেড়েছে খুলনা টাইটানস। 

চিটাগং ভাইকিংসের টার্গেট ১৭১ রান। সূর্য তখন মিরপুরের আকাশে পশ্চিমে হেলে পড়েছে। কমে গেছে রোদের উত্তাপও। বিকালের রোদ উপভোগ করতে করতে খেলা দেখছেন দর্শকরা। ভাইকিংসদের কাছ থেকেও দুর্দান্ত কিছুরই আশা ছিল ভক্তদের। চার-ছক্কার ফুলঝুরি যেমনটা ছুটেছিল খুলনার ইনিংসে। কিন্তু শুরুতেই কঠিন আঘাত আবু জায়েদ রাহির। প্রথম ওভারেই লুক রনচি ও সৌম্য সরকারের উইকেট বিসর্জন চিটাগং ভাইকিংসের আশায় গুড়েবালি নিক্ষেপ করে। কিন্তু ইনিংসের তখনো অনেকটা পথ বাকি। এর মধ্যেই ঘটনাটি ঘটান রিলি রুশো। এক অবিশ্বাস্য ক্যাচে দিলশান মুনাবিরাকে সাজঘরে ফেরান এ প্রোটিয়া ক্রিকেটার। মিড উইকেটে শূন্যে ভেসে থাকা বল লুফে নিতে তিনি বিদ্যুেবগে ছুটে আসেন ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে। শেষটায় পাখির মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন। আউট হওয়া লঙ্কান ব্যাটসম্যান মুনাবিরা আগের চার বলে ১০ রান তুলেছিলেন। ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতম হওয়ার আগেই তাকে সাজঘরে ফিরিয়ে জয়ের পথ অনেকটাই পরিষ্কার করেছিলেন আবু জায়েদ রাহি। তবে উন্মুক্ত খড়গ হাতে তখনো উইকেটে ছিলেন চিটাগংয়ের অধিনায়ক মিসবাহ উল হক। ম্যাচ উইনার হিসেবে তার যথেষ্ট খ্যাতি আছে। ১৬তম ওভারের ৫ম বলে নাটকীয় ক্যাচে তাকেও ফিরিয়ে দেন আবু জায়েদ। ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ নিতে গিয়ে মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন শান্ত। প্রথম ও দ্বিতীয়বারেও বল নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন তিনি। তবে মাটির সংস্পর্শে আসার আগেই তৃতীয়বারের চেষ্টায় ক্যাচ নিশ্চিত করেন শান্ত। রুশো আর শান্তর লুফে নেওয়া এই দুটি ক্যাচই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। চিটাগং ভাইকিংসকে ১৫২/৭ রানেই থামতে বাধ্য করেন আবু জায়েদরা। খুলনার এই বোলার তিন ম্যাচে ৬ উইকেট শিকার করলেন (ঢাকার বিপক্ষে ২টি ও চিটাগংয়ের বিপক্ষে ৪টি)। গতকাল ম্যাচসেরার পুরস্কারও জয় করেন তিনিই। ৬টি করে উইকেট শিকার করেছেন সিলেট সিক্সার্সের ইংলিশ বোলার লিয়াম প্লাঙ্কেট এবং চিটাগং ভাইকিংসের তাসকিনও। তিনজন সমান্তরালে থেকে শিকারির তালিকায় শীর্ষে আছেন বিপিএলের চলতি মৌসুমে।

খুলনা টাইটানসের ইনিংস খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলতে থাকলেও শেষদিকে এক দৌড়ে পৌঁছে যায় ১৭০ রানে। ৫ ওভারে ৬৯ রান তোলার কারিগর আরিফুল হক (২৫ বলে ৪০) ও ব্রেথওয়াইট (১৪ বলে ৩০)। এছাড়াও মাত্র ৪ বলে ১১ রান করে অবদান রেখেছেন জফরা আর্চার। শেষদিকের এই ঝড়ই চিটাগং ভাইকিংসকে তছনছ করে দিল। বিষয়টা স্বীকার করলেন অধিনায়ক মিসবাহও। পাকিস্তানি এই ক্রিকেটার সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, ‘রান ১৫০’র মধ্যে থাকলেই আমরা জিততে পারতাম সহজে।’

তবে চিটাগং ভাইকিংসও সাবলীল গতিতে ছুটছিল লক্ষ্যের দিকে। শুরুতে আবু জায়েদ রাহির বোলিং তোপে পথ হারালেও মিসবাহ (৩০)-সিকান্দার (৩৭) দলকে ফিরিয়েছিলেন। দুজনের ৫৫ রানের জুটি অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিল চিটাগংকে। লুইস রিস ১৭ বলে ২২ রান করে কিছুটা আশাও জাগিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫২ রানের বেশি যেতে পারেনি চিটাগং ভাইকিংস। আসরের দ্বিতীয় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে খুলনা। প্রথম ম্যাচে তারা ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে হেরেছিল।

এরপর টানা দুই ম্যাচ জিতল। তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করে পয়েন্ট তালিকার তিনে অবস্থান করছে খুলনা। ৫ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে সিলেট।

স্কোর কার্ড

খুলনা টাইটানস : ১৭০/৭ (২০ ওভার)। চিটাগং ভাইকিংস : ১৫২/৭ (২০ ওভার)

রাজশাহী কিংস : ১১৫/৭ (২০ ওভার)। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস : ১২০/১ (১৫.১ ওভার)

সর্বশেষ খবর