ক্রীড়াঙ্গনে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব দীর্ঘস্থায়ী নয়। যতদিন থাকে এর মধ্যে যতটুকু পারা যায় ক্রীড়াঙ্গনকে নিরাপদ স্থানে দেখতে চান এই উপদেষ্টা। ফেডারেশন যাতে সঠিক ও স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয় এ লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে, এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অভিজ্ঞ সংগঠকদের দিলে ভালো হতো। যাক, অতীতে যা হয়নি এবার তো তা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যা করা হচ্ছে তাতে অনিয়ম বা বিতর্কের মৃত্যু ঘটবে কি? যারা বিতর্কিত তারা কি ক্রীড়াঙ্গন থেকে বিতাড়িত হয়েছেন? এতদিনের অনিয়ম অল্প দিনের মধ্যে দূর করা হবে তা আশা করাও ঠিক হবে না।
বলা হচ্ছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও বিতর্কের কথা। প্রকৃতপক্ষে ক্রীড়াঙ্গন তো বরাবরই অশুভ শক্তির হাতে বন্দি। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির আমলে একই দৃশ্যের দেখা মিলেছে। এ নিয়ে তর্ক করার কোনো কিছু আছে কি? বলা হয়, খেলাধুলার মধ্যে আবার রাজনীতি কী?
এ কথা পৃথিবীর সব দেশের জন্য প্রযোজ্য হলেও বাংলাদেশে শুধু বেমানান। স্বাধীনতার পর থেকে ক্রীড়াঙ্গনও রাজনীতিতে বন্দি। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের সমর্থিত লোকদেরই ফেডারেশনে প্রাধান্য দেওয়া হয়। অতীতে অ্যাডহক কমিটি ও পরে নির্বাচিত কমিটিও দলীয়করণমুক্ত হতে পারেনি। এখানে মেধা ও অভিজ্ঞতার কোনো মূল্য নেই।
১৬ বছরে যেভাবেই হোক আওয়ামী লীগই সরকারে ছিল। দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতায় থাকায় ক্রীড়াঙ্গনে যেন অনিয়মের এভারেস্ট গড়ে ছিল। নির্বাচন তো আর নির্বাচন ছিল না। যা হতো লোকদেখানো। খেলাধুলায় কখনো জড়িত না থাকার পরও শুধু আওয়ামী লীগের সমর্থক বলেই ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসানো হয়েছে অনেককে। এখনো তারা মেয়াদের কারণে পদ ধরে আছেন। খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিল না এমন লোক ফেডারেশন শাসন করায় ১৬ বছরে ক্রীড়াঙ্গনে শনির দশা নেমে এসেছিল। খেলাধুলার উন্নয়নে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। অথচ দুর্নীতিতে তারা ঠিকই চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।
স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে এক সপ্তাহের মধ্যে নাকি ফেডারেশনগুলোর নির্বাচিত কমিটির বিলুপ্তি শুরু হবে। গঠন করা হবে অ্যাডহক কমিটি। অ্যাডহক কমিটি সাধারণত দায়িত্বে থাকে নব্বই দিন। এবার কী হবে বলা মুশকিল। কেননা ১৬ বছরের আবর্জনা সরাতে সময় তো নেবেই। তাঁদের কাজ হবে সব ফেডারেশন ঠিক করে নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্যদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া। প্রশ্ন হচ্ছে, অ্যাডহক বা সামনের নির্বাচনে প্রকৃত যোগ্যদের ঠাঁই হবে কি না? এখনো কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনে অশুভ শক্তিই বিরাজ করছে। লবিং চলছে জোরেশোরে।
হকি ফেডারেশনের পলাতক মুমিনুল হক সাঈদ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের যারা সঙ্গী ছিলেন তারাও এখন বিভিন্ন ফেডারেশনে বসতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। স্বচ্ছতা আনতে মহৎ উদ্যোগ নেওয়ার পর সাঈদদের মতো বিতর্কিত লোকদের দোসররা যদি ফেডারেশন শাসন করেন তাহলে আর লাভ হলো কী?
ক্রীড়া উপদেষ্টাকে এ ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে। অন্যের ওপর খুব বেশি ভরসা করাটা ঠিক হবে না। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রীড়া সংগঠক প্রয়াত জাফর ইমাম এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনে কেউ কারও আপন নয়। সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকে অথচ তারা যে ধান্দাবাজ তা চিহ্নিত করা কঠিন।’