শুল্ক নিয়ে জটিলতায় সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। ভারতের পরিমাপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবসম্মত শুল্কায়নের দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে এই স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে তামাবিল স্থলবন্দরে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। আমদানি বন্ধ থাকায় একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক।
আমদানিকারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন খনি থেকে উত্তোলিত পাথর ও চুনাপাথর আমদানি করে থাকেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। উত্তোলিত পাথর ও চুনাপাথর পরিষ্কার না করেই রপ্তানি করে থাকেন সে দেশের রপ্তানিকারকরা। ফলে পাথর ও চুনাপাথরের সঙ্গে মাটি, বালু, পানি ও বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা ট্রাকে করে আসে। এজন্য তামাবিল স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের ডাউকি শুল্ক স্টেশন ‘রান অব মাইনিং’ হিসেবে রপ্তানি করা পাথর-চুনাপাথরের ওজনে কিছুটা ছাড় দিয়ে পরিমাপ করে। ট্রাকের আকার ভেদে ১ থেকে ২ টন ওজন বাদ দিয়ে পরিমাপ করেন ভারতের শুল্ক কর্মকর্তারা। একই পরিমাপে এতদিন তামাবিলেও আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কায়ন হতো। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর তামাবিল স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা বালু, মাটি, পানি ও আবর্জনা বাবদ ওজনে কোনো ছাড় দিতে রাজি হননি। ‘ওয়েট ব্রিজে’ যে ওজন আসে সেই অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণ করেন তারা। এতে বেঁকে বসেন আমদানিকারকরা। আমদানিকারকদের দাবি, ‘রান অব মাইনিং’ বা খনি থেকে সরাসরি সরবরাহকৃত উল্লেখ করেই ভারত পাথর-চুনাপাথর রপ্তানি করে থাকে। এজন্য ভারতের পক্ষ থেকে ওজনে ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ভারতের ধার্যকৃত ওজন না মেনে বালু ও মাটি বাবদ কোনো ছাড় না দিয়ে পরিমাপ করায় আমদানিকারকরা পড়েছেন বিপাকে। এভাবে পরিমাপ করে শুল্ক নির্ধারণ করলে প্রতি ট্রাকে ব্যবসায়ীদের অন্তত ১০-১৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। বালু ও মাটিসহ ওজন নির্ধারণ অযৌক্তি দাবি করে আমদানিকারকরা গত ১৮ নভেম্বর থেকে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ করে দেন। আমদানিকারকরা আরও জানিয়েছেন, শুল্কায়ন নিয়ে জটিলতায় আমদানি বন্ধ থাকায় সিলেটের ব্যবসায়ীদের প্রায় শত কোটি টাকার এলসি আটকা পড়েছে। সময়মতো আমদানি করতে না পারলেও তাদেরকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এদিকে, পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় তামাবিলে লোড-আনলোডের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের কয়েক শ পাথর ভাঙার মেশিনেও কাজ কমে গেছে। পাথর ভাঙার মেশিনগুলোর শ্রমিকরাও অলস সময় পার করছেন।