৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৮:৩৩
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

চীনের সাথে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কতটুকু ভারতের

অনলাইন ডেস্ক

চীনের সাথে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কতটুকু ভারতের

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. অসীমা গয়াল বলেছেন, সীমান্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চীনের সাথে বাণিজ্যে ভারতকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। চীনের সাথে বাণিজ্যে ভারত লাভবান হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এই সম্পর্কে অবস্থান কঠোর করতে হবে ভারতকে, চীনের বাজারে ঢোকার সমান সুযোগ আদায় করতে হবে।

নরেন্দ্র মোদীর এই উপদেষ্টার বক্তব্যে চীনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প সরকারের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি স্পষ্ট। কিন্তু চীনের ওপর চাপ প্রয়োগের সেই ক্ষমতা কি ভারতের রয়েছে?

জুনের মাঝামাঝি লাদাখ সীমান্তে চীনের সাথে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সৈন্যের মৃত্যুর পর ভারতে চীন বিরোধী মনোভাব তুঙ্গে।

ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। জনরোষের মাঝে, নরেন্দ্র মোদির সরকার দুই দফায় দেড়শরও বেশি চীনা সফটওয়্যার অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। চীনা বিনিয়োগের ওপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। চীন থেকে রঙিন টিভি আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এসব পদক্ষেপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. গয়াল বলেন, ভারতকে এই পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ তথ্যের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং ক্রেতাদের আবেগকে প্রাধান্য দিতে হবে।

চীন এখন ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী দেশ, কিন্তু বছরে বর্তমানে যে প্রায় ১০,০০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয় তার ভারসাম্যের দুই-তৃতীয়াংশই চীনের পক্ষে।

২০১৮ সালে ভারত ও চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯৬০০ কোটি ডলার। কিন্তু ভারসাম্য একচেটিয়া ভারতের বিপক্ষে। সে বছরই বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৮০০ কোটি ডলার।

এই ঘাটতি নিয়ে ভারতের সরকারের ভেতর অস্বস্তি রয়েছে, অভিযোগ রয়েছে। সীমান্ত নিয়ে চরম বৈরিতা শুরু হওয়ার পর সেই অসন্তোষ এখন মাথা চাড়া দিয়েছে।

চীনের ওপর নিজের পছন্দমত শর্ত আরোপ কি সম্ভব?

দিল্লির জওহরলাল ইউনিভার্সিটির (জেএনইউ) অর্থনীতির অধ্যাপক জয়তী ঘোষ বলেন, তিনি মনে করেন না চীনের ওপর কোনো শর্ত দেওয়ার ক্ষমতা এখন ভারতের রয়েছে। চীন এখন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক পার্টনার, কিন্তু চীনের কাছে ভারত আদৌ তা নয়। চীনের সাথে বাণিজ্য ভারতের কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই বাণিজ্যের ওপর তাদের যে নির্ভরতা, চীনের কাছে ভারতের বাজারের গুরুত্ব আদৌ ততটা নয়।

চীনা রপ্তানির সর্বশেষ পরিসংখ্যান সেটাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ২০১৮ সালে ভারতে চীনের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৫০০ কোটি ডলার, কিন্তু ঐ একই বছরের ভিয়েতনামের মতো ছোট একটি দেশে চীন ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। জাপানে তাদের রপ্তানি ছিল ১৪,৮০০ কোটি ডলার, এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের রপ্তানি আয় ছিল ৫৫, ৮০০ কোটি ডলার।

তাছাড়া, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লার, কারখানার ভারী যন্ত্র, শিল্পের কাঁচামাল, মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে পাড়ার দোকানে বৈদ্যুতিক ফ্যান এবং বাচ্চাদের খেলনা এর সবকিছুর যোগানের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ভারত।

ড. জয়তী ঘোষ বলেন, ওষুধ শিল্পের মতো জরুরি খাতের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আসছে চীন থেকে। সেটা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া অসম্ভব। খেলনা আমদানি বন্ধ করতে পারবেন, কিন্তু কলকারখানার যন্ত্রের হঠাৎ বিকল্প কী? চীন থেকে টিভি আমদানি না হয় বন্ধ করলেন, কিন্তু দাম তো অনেক বেড়ে যাবে। চীনের ওপর ব্যাপক ভিত্তিক এই নির্ভরতা হয়তো কমানো সম্ভব, কিন্তু সময় লাগবে।

দুই দেশের বাণিজ্যে বড় কোনো হুমকি তৈরির কোনো লক্ষণ এখনও নেই। গত তিন মাসে চীনের সাথে বাণিজ্য গত বছর একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে, এবং সবচেয়ে যেটা মজার ব্যাপার যেটা তা হলো চীনের তুলনায় ভারতের রপ্তানি বেশি বেড়েছে।

চীনা সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুনের ভেতর চীন থেকে ভারতের আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ২৪.৭ শতাংশ, কিন্তু চীনে ভারতের রপ্তানি বেড়েছে ৬.৭ শতাংশ। এপ্রিলে চীনে ভারতের রপ্তানি ছিল ২০০ কোটি ডলার যা জুলাইতে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫০ কোটি ডলার।

বিশেষ করে গত তিন মাসে চীনে ভারতের রপ্তানি বাড়ার প্রধান কারণ ভারত থেকে কাস্ট আয়রনের রপ্তানি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। চীনের কাস্টমস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ভারত থেকে কাস্ট আয়রন আমদানি হয়েছে ২ কোটি টন, যেখানে ২০১৯ সালের পুরো বছরে আমদানি হয়েছে ৮০ লাখ টন।

ভারতে অর্থনীতিবিদ বিবেক কাউল বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সাম্প্রতিক সব পরিসংখ্যান দেখলে মনে হয়, রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ীরা মানুষের সামনে যত কথাই বলুন না কেন, তলে তলে তাদের স্বার্থের অনুকূলেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এবং শিল্প মালিকরা মনে করছেন চীনের সাথে ব্যবসা এখন তাদের কাছে সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর