শিরোনাম
১০ জুন, ২০২৩ ১২:৫৬

জমজমাট প্রচারণা, ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

সিটি নির্বাচন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

জমজমাট প্রচারণা, ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন বর্জন ঘোষণার পর নগরবাসীর কাছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন ‘পানসে’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সবার ধারণা ছিল বিএনপি ও আরিফবিহীন নির্বাচন হবে একতরফা। খালি মাঠে গোল দেবেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে দৃশ্যপট। জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। আভাস মিলছে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছেন না। ভোটাররাও ধীরে ধীরে সরব হচ্ছেন।

সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন আটজন। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলনের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম। জাকের পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচারণায় অনেক পিছিয়ে পড়েছেন। নগরীতে তাদের প্রচারণা খুব একটা চোখে পড়ার মতো নয়। এখন আনোয়ারুজ্জামান, বাবুল ও মাহমুদুল হাসানকে নিয়েই জোর আলোচনা। এক সময় আনোয়ারুজ্জামানের প্রচারণার গতির সঙ্গে তাল মিলাতে পারছিলেন না বাবুল ও মাহমুদুল। কিন্তু প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ধীরে ধীরে গতি বাড়ে এ দুই প্রার্থীর। তাদের পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীও একজোট হয়ে মাঠে নামেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইতে থাকেন এ দুই প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা। প্রচারণায় গতি আসে। সরকার তথা নৌকাবিরোধী ভোটাররা সরব হতে থাকেন। তাদের সমর্থন বাড়তে থাকে লাঙ্গল ও হাতপাখায়। ফলে নৌকার সঙ্গে এই দুই প্রতীকেরও নির্বাচনী আওয়াজ বাড়তে থাকে। বাবুল ও মাহমুদুলের নৌকাবিরোধী প্রচারণা প্রভাব ফেলতে শুরু করে ভোটারদের মাঝে। ভোটের মাঠে অবস্থানও শক্ত করে নিচ্ছেন তারা। সূত্র জানায়, গাজীপুরের নির্বাচনের ফল দেখে সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে নীরব ভোট বিপ্লবের আতঙ্ক দেখা দেয়। সেই আতঙ্ক দূর করতে কেন্দ্র থেকে নেতারা এসে দলের নেতা-কর্মীদের  ঐক্য আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। ‘সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার হ্যাটট্রিক পরাজয় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। গাজীপুরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে সিলেট আওয়ামী লীগের অবস্থা রংপুরের মতো হবে’- কেন্দ্রীয় নেতারা, সতর্কও করছেন দলীয় নেতা-কর্মীদের। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মহল মনে করছেন, সিলেটে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা থাকলেও নজরুল ইসলাম বাবুল ও মাওলানা মাহমুদুল হাসানের মূল চ্যালেঞ্জ হবে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি। কর্মী সংকটের কারণে সাধারণ সমর্থক ও ভোটারদের তারা কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে নৌকার পক্ষের ভোটারদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটের মানুষ উন্নয়নে বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উন্নয়নে বিশ্বাস করেন। সিলেটের উন্নয়নে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু অপরিকল্পিত কাজের জন্য নগরবাসী এর সুফল পাননি। একটি পরিকল্পিত নগরীর প্রত্যাশায় নগরবাসী নৌকা প্রতীক বেছে নিয়েছে। নগরজুড়ে নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।’
ইসলামী আন্দোলন মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের শিকার দেশের মানুষ। 
সিলেটের মানুষ আওয়ামী লীগের মেয়র দেখেছে। তাদের শাসনও দেখেছে। তাই নগরবাসী আর তাদের দলীয় মেয়র দেখতে চাইছেন না। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী কেউই সিলেট নগরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। তারা নির্বাচনী নেতা। ভোট শেষ হওয়ার পর তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে। সব দিক বিবেচনা করে মানুষ তাদের পছন্দের প্রতীক হিসেবে হাতপাখাকে বেছে নিয়েছে। হাতপাখার পক্ষে জোয়ার উঠেছে।’

জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘এই সরকার কিংবা সরকারদলীয় প্রার্থীর ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। মানুষ বিকল্প খুঁজছে। তারা চাইছে জাতীয় পার্টির মতো দেশদরদি দলের প্রতিনিধি। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে ২১ জুন বিপুল ভোটের ব্যবধানে লাঙ্গল বিজয়ী হবে।’

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর