নতুন অর্থবছরের বাজেট কার্যকর হতে না হতেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। বেড়ে গেছে অনেকগুলো পণ্যের দাম। এবারের বাজেটে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) পর্যায়ে পরোক্ষ করের হার দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
দেড় শতাংশের স্থলে ৩ শতাংশ ধার্য করার ফলে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রিত পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। বাজেটে আমদানি পর্যায়ে প্রায় ৪ হাজার পণ্যের উপর কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর এই ৪ হাজার পণ্যের মধ্যে বেশির ভাগই নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্য যা নিম্ন-মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করে থাকেন।
এবারের বাজেটে যেসব পণ্যের উপর নতুন করে করের বোঝা চাপানো হয়েছে সেগুলো ছাড়াও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়ছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও গত তিন দিনের ব্যবধানে অনেক নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে রড, সিমেন্ট, পার্টিকেল বোর্ড, সিগারেট, গুল, জর্দ্দা, মধু, মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, ওভেন, বিভিন্ন ধরনের কুকার, কুকিং প্লেট, গ্রিলার, রোস্টারের মতো কম প্রচলিত পণ্যেরও।
সরেজমিন জানা যায়, গত তিন দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের বাজারে দেশে উৎপাদিত সিমেন্টের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। এর আগে কখনো এই হারে সিমেন্টর দাম বাড়েনি বলে জানালেন সাধারণ ক্রেতা এবং বিক্রেতারা।
তবে সিমেন্ট কারখানার মালিকরা বলছেন, বাজেটে সিমেন্টের উপর বিভিন্ন ধরনের শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যার পরিমাণ বস্তাপ্রতি ৫০ টাকার মতো। তারা বাজেটে বর্ধিত শুল্ক সমন্বয় করেছেন মাত্র।
এদিকে গত দুই দিনের ব্যবধানে বাজারে প্রতি টন রডের দাম বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকা। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জানা গেছে, গত অর্থবছরে আমদানি ও স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা লোহার স্ক্র্যাপ থেকে তৈরি এমএস রড ও অ্যাঙ্গেল তৈরিতে প্রতি টনে স্তর ভেদে ৪৫০ থেকে ৫৪০ টাকা ও ৯০০ টাকা ভ্যাট ছিল। কিন্তু এবারের বাজেটে প্রতিটন রডে স্তর ভেদে ভ্যাট এক হাজার টাকা, এক হাজার ২০০টাকা ও দুই হাজার টাকা করা হয়েছে। যা গত বাজেটের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
এছড়া গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাবও রড ও সিমেন্টর উপর পড়তে শুরু করেছে। যা আগামী কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখন নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এতে দেশের আবাসন খাতের বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন জানিয়ে রিহ্যাব।
রিহ্যাব চট্টগ্রাম অংশের চেয়ারম্যান আবদুল কইয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘এমনিতেই আবাসনখাতের ব্যবসায়ীরা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই, তার উপর রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে যাবে। ফলে ফ্ল্যাটের দামও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে সামগ্রীক আবাসন ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকার ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রি বাবদ দাম কমানেরা যে উদ্যোগ নিয়ে আবাসনখাতকে আলোর মুখ দেখিয়েছে, রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাতে আবারও অন্ধকার ঘণিয়ে আসবে।’
এদিকে চট্টগ্রামে পাইকারি ও খুচরা বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। চালের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা, আটা ১ টাকা, আলু ৪.৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৩ টাকা, রসুন (দেশি) ৪০ টাকা, আদা ২৫ টাকা, চিনি ২.২০ টাকা শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া চা-পাতা কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, গুঁড়োদুধ ১০০ টাকা, ডিটারজেন্ট পাউডার কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে গেছে। এর বাইরে সয়াবিন তেল, পাম ওয়েল, সান ফ্লাওয়ার তেল, সরিষার তেলের আমদানি পর্যায়ের উপর মূসক আরোপ করা হয়েছে। তবে খুচরা বাজারে এখনও ভোজ্য তেলের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কয়েকদিনের মধ্যে সবধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন