ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজি অব চিটাগাং (ইউএসটিসি) এর ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা ড. মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে ক্লাসে ‘অপ্রাসঙ্গিকভাবে যৌন’ বিষয় আনার অভিযোগের বিষয়ে কোনো সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি।
এ ঘটনায় অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এঘটনার প্রায় তিনমাস পর আবারও গত ২ জুলাই প্রবীণ এ শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে হেনস্থার ঘটনা ঘটে। কিন্তু এ ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার এবং তদন্ত কমিটি গঠন ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে অভিযোগ নাগরিক সমাজের।
অভিযোগ ওঠেছে, ঘটনার পাঁচদিন পরও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া, গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থী এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা অন্যদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অপরাধীরা ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার প্রশ্রয় পাচ্ছে। তাছাড়া তিনমাস আগে কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াটাও পরবর্তী ঘটনায় উৎসাহ যোগায় বলে অভিযোগ উঠে।
ইউএসটিসির উপ-উপাচার্য মুহাম্মদ নুরুল আবসার বলেন, ‘ঘটনার পর গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। কমিটি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিবেদন দেবে। এরপরই এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার ব্যাপারে সচেতন রয়েছে।’
ইউএসটিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও মামলার বাদী দিলীপ কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘ইতোপূর্বে ড. মাসুদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু এর আগেই আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। আশা করছি, বর্তমানে চলমান তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলাও এখন চলমান।’
নাগরিক সমাবেশ ও মানববন্ধন
বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের ওপর হামলা ও প্রাণনাশের চেষ্টার প্রতিবাদে ‘সর্বস্তরের সাংস্কৃতিককর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম’ এর ব্যানারে সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল মনসুর, সাংবাদিক আবুল মোমেন, শিক্ষাবিদ ঢালী আল মামুন, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষক নাসিমা আকতার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাঈনুল হাসান চৌধুরী, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মোস্তাফা, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, নারী নেত্রী নুর জাহান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘একজন শিক্ষককে এভাবে অপমান করা মানে গোটা শিক্ষক সমাজকে অপমান করার নামান্তর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে আমাদের মনে হয়। অথচ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ আরো কঠোর ভূমিকা পালন করতে পারত। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
প্রসঙ্গত, গত ২ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাসুদ মাহমুদকে নিজ কক্ষ থেকে বের করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনায় খুলশী থানার পুলিশ ইউএসটিসি’র ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স শ্রেণির ছাত্র মাহমুদুল হাসানকে (২২) গ্রেফতার করে।
তাছাড়া ঘটনার দিন রাতেই ইউএসটিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। মাহমুদুল হাসান বর্তমানে দুই দিনের রিমান্ডে আছেন।
এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি। তাছাড়া গত এপ্রিল মাসে তাকে হয়রানির প্রতিবাদের বিবৃতি দিয়েছিলেন দেশের বরেণ্য ৫০৭ বিশিষ্ট নাগরিক।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন