করোনা সংক্রমণ দিন দিন বেড়েইে চলেছে। এই সংক্রমণের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকার তথা প্রশাসনের মনিটরিং সেলও কাজ করছেন নিয়মিত। তাছাড়া এ করোনা পরিস্থিতির কারণে গণ-পরিবহণের বিভিন্ন ভাড়া বৃদ্ধির ফলে যাত্রী ও ভোক্তা-অধিকার সংগঠনের নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পরিবহণের চালক-হেলপারদের সঙ্গে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে নিয়মিত লেগেই আছেন উভয়ের মধ্যে তর্ক-বিতর্কও। অন্যদিকে গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা ও ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হলেও মালিক-শ্রমিকরা দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম নগরীর মুরাপদপুর এলাকার বাসিন্দা আফরোজা বেগম নামের একজন পোশাক শ্রমিক বলেন, আমাদের স্বল্প আয়। এতেই সংসার চালাতে হয়। কিন্তু বাড়তি ভাড়া দিয়েও যাতায়াত করতে হচ্ছে। এরপরও সময়মতো গাড়ি না পেলে চাকরি তো আর থাকবে না। এক ঘণ্টা হচ্ছে অপেক্ষা করছি। কোন গাড়িই পাচ্ছি না। রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। ভোগান্তির শেষ নেই।
অপর যাত্রী হাফেজ আহমদ বলেন, বাসা থেকে বের হলেই যেন পদে পদে ভোগান্তি। গণপরিবহণে যাত্রী না নেওয়ায় বাধ্য হয়ে রিকশা নিতে হচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া চেয়ে বসছে রিকশা চালকরাও। সড়কে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থায় এখন চাকরি বাঁচানোই যেন দায়।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি তদারকি করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। অভিযোগ পেলে মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মমিনুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রামে আশংকাজনক হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। কিন্তু বাড়ছে না জনসচেতনতা। এখনও অনেকেই মাস্ক ছাড়াই বাইরে যাচ্ছেন। মানছেন না স্বাস্থ্যবিধিও। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে প্রশাসন। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে স্থানে সভা-সমাবেশ বন্ধ করাসহ নগরীর তিনটি প্রবেশ মুখে বসানো হচ্ছে চেক পোষ্ট। মাস্ক পরতে বাধ্য করতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। সচেতনতা বাড়াতে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে মাস্কও।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের আদেশে বলা হয়েছে, ৬০ ভাগ ভাড়া বেশী নিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। যাত্রী নিতে হবে আসন সংখ্যার অর্ধেক। কিন্তু এই নির্দেশনা না মেনে পূর্বের ভাড়ার দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, যাত্রীদের জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় করা হলেও বিআরটিএ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। এতে স্বল্প আয়ের কর্মজীবী মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে দেশব্যাপী গণপরিবহনে যাতায়াত ও ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
তাছাড়া করোনার সংক্রমণের মহাদুর্ভোগে গণপরিবহন নগরবাসীর জীবনে নতুন ভোগান্তি যোগ করেছে। নির্ধারিত ভাড়া গণপরিবহনগুলো আদায় করছে কিনা, সে বিষয়ে কোনও নজরদারি নেই। তবে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির মতো হঠকারী সিদ্ধান্তে উপনীত না হতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ’র প্রতি আহবান জানিয়েছেন ক্যাব নেতারা।
চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের অতিরিক্ত মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল বলেন, ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি যাত্রী পরিবহন না করতে প্রত্যেক বাস, মিনিবাস মালিক-শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর