চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিষ্ফোরণে আহত হন ডিপোর চালক মাসুদ রানা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাত ৩টা ৪০ মিনিটে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাাতলের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মাসুদের বাড়ি জামালপুর। ফলে তার পরিবারের জন্য এই শহর অচেনা। তাই মরদেহ নিয়ে বিপাকে পড়েন মাসুদের স্ত্রী সুমি। এ সময় সুমির পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা এবং সার্বক্ষণিক তদারকিতে স্বামীর মরদেহ বাড়িতে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এভাবে সীতাকুণ্ড ট্রাজেডিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নিহত, আহত ও দগ্ধদের পাশে নানাভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে। নিহত-আহতদের চরম দুঃসময়ে আশার আলো হয়ে পাশে থাকছে। দেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা। ছড়াচ্ছে নির্ভরতার আলো। সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, ১০০ স্টাফ ও ২০০ ভলান্টিয়ার। সবাই পর্যায়ক্রমে হাসপাতালের সামনে দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের সহায়তা কেন্দ্রের সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০০ জন স্টাফ পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া, স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ নগদ অর্থ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাদ্য সামগ্রী ইত্যাদি প্রদান করে মানবিক এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত এ সেবা কার্যক্রম চলমান থাকবে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক বলেন, সহায়তা কেন্দ্রের উদ্যোগে ভর্তিকৃত রোগীদের ওয়ার্ডে গিয়ে গিয়ে রোগীর স্বজনদের মাঝে ও ভলান্টিয়ারদের নাস্তাসহ খাবার প্রদান, মুমূর্ষু রোগীদের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করা, নিহত ব্যক্তি, মুমূর্ষু আহত ব্যক্তি ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়ন ও আহত-নিহতদের স্বজনদের নানাভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে ২০০ বেশি রোগীকে ওষুধ দিয়ে সহায়তা এবং তিনশতাধিক রোগীর জন্য ফার্মেসি থেকে ওষুধ ক্রয় করে বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।
জানা যায়, গত শনিবার রাতে দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসন হতাহতদের উদ্ধার ও দ্রুত সেবা প্রদানে চমেক হাসপাাতলের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ারের সামনে স্থাপন করে ‘জরুরি সহায়তা কেন্দ্র’। এই সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে হাসপাতালে আগত রোগীদের সেবা প্রদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। একেন্দ্রের মাধ্যমে মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসা সহায়তা, যেমন ওষুধ, নগদ অর্থ, শুকনো খাবার ও জরুরি যাতায়াতে অ্যাম্বুলেন্স প্রদান, নিহত ব্যাক্তি শনাক্তকরণে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও নমুনা সংরক্ষণে জন্য ডিপফ্রিজের ব্যবস্থা, নিহতদের শনাক্তকরণের পরে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরের জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগদ ৫০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান, আহত রোগীর স্বজনদের ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।
হাসপাতালের ৩৬ নং ওয়ার্ডের রোগী নুরুল ইসলাম বলেন, আমার একমাত্র অভিভাবক আমার মা এই কয়দিনে আমার সঙ্গে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জেলা প্রশাসনের সদস্যরা আমাকে এক্সরে করতে নিয়ে গেছেন এবং প্রয়োজনীয় সকল সেবা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন