নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ফিল্মি স্টাইলে তাণ্ডব চালিয়েছে স্থানীয় কিশোর গ্যাং। তুচ্ছ ঘটনায় আলমগীর হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির উপর হামলা করে নির্যাতন করা হয়। রাস্তা বন্ধ করে কিশোর গ্যাংয়ের সাত আটজন সদস্য মিলে দুই দফায় তাকে বেধড়ক মারধর করে। তার জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু সড়কে প্রায় বিশ পচিশ মিনিট যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরা।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে চাষাঢ়ার বিজয়স্তম্ভের নিকটবর্তী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রিপারেটরী স্কুলের মধ্যবর্তী বঙ্গবন্ধু সড়কে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত আলমগীর সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি শহরের উত্তর চাষাঢ়া এলাকার রবিনের বাড়ির ভাড়াটে।
নির্যাতনের শিকার আলমগীর হোসেন তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, সাড়ে আটটার দিকে তিনি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এসময় শহরের আমলাপাড়া মাছুয়াপাড়া এলাকার ইসলাম মিয়ার বখাটে ছেলে অনিক (১৭) ও তার এক বন্ধু মোটরসাইকেল বেপরোয়াভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় তার শরীরে ধাক্কা লাগে এবং তিনি ব্যথা পান। এতে আলমগীর প্রতিবাদ করলে অনিক তাকে চড় থাপ্পড় মারে। এতে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে অনিক ও তার বন্ধু বাহার নামে তাদের এলাকার কথিত বড় ভাইসহ কয়েকজনকে ফোন করলে মুহূর্তের মধ্যে তিনটি মোটরসাইকেলে চড়ে ছয় সাতজন ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়। এরপর সবাই মিলে তাকে প্রায় পনের মিনিট এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পর ঘুষি লাথি মেরে আহত করে। দুই তিনজন তাদের মাথার হেলমেট খুলে সেটি দিয়ে তার মাথায় একের পর এক আঘাত করে। তার জামা কাপড় টেনে হেঁচড়ে ছিড়ে ফেলে। এক পর্যায়ে তার শার্টের পকেটে রাখা সাড়ে আট হাজার টাকা ছিনতাই করে হুমকি দিয়ে চলে যায় হামলাকারিরা।
এ ঘটনার পর আশপাশের লোকজন আহত আলমগীরকে উদ্ধার করে সদরের জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পরে সদর মডেল থানায় গিয়ে এ ব্যাপারে তিনি লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ঘটনায় সেখানে রাত এগারোটা পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করে।
আহত আলমগীর হোসেনের ছোট ভাই জাহাংগীর হোসেন বলেন, হামলাকারিরা আমার ভাইয়ের কানে বেশ কয়েকটি লাথি দিয়েছে। যার কারণে ভাই শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। কানে কিছুই শুনছেন না। ভাইয়ের উপর হামলাকারি কিশোর গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতার ও ন্যায় বিচার দাবি করেন তিনি।
ঘটনাস্থলে যাওয়া সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক পরিমল বলেন, খবর পেয়ে আমি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের গ্রেফতার করতে মাছুয়াপাড়া ও আমলাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু কাউকে পাইনি। তবে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা তাদের গ্রেফতার করতে চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন, অনিকের ব্যাপারে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে খোঁজ খবর নিয়েছি। তার মা ইয়াবার ব্যবসা করে বলে পঞ্চায়েত কমিটি তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করায় বর্তমান ঠিকানা কেউ বলতে পারছে না। তবে আমরা তাকে গ্রেফতার করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২০ অক্টোবর রাত আটটার দিকে চাষাঢ়া শহীদ মিনারের সামনে মোবাইল চোর আখ্যা দিয়ে শান্ত নামে শনির আখড়া এলাকার এক যুবককে প্রকাশ্যে মার ধরসহ এমন ফিল্মি স্টাইলে তান্ডব চালায় স্থানীয় কিশোর গ্যাং। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল