রাজশাহীতে প্রায় এক হাজার ৩০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও ৪০টি মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত রাজশাহী জেলা ও মহানগরীতে ৪০টি মামলায় এসব নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এই দাবি করেন।
মিনু অভিযোগ করেন, পুলিশি হয়রানি ও গণগ্রেফতার অভিযানের কারণে তৃণমূল পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও নিজেদের বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছে না। অনেক জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে না পেয়ে পুলিশ পরিবারের সদস্যদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মিজানুর রহমান বলেন, বিএনপি বারবার এই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে দেশের জনগণের যে সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে, তা নিশ্চিত করার জন্য সবভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এ সরকার তাতে কোনো কর্ণপাত না করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। বিএনপি মনে করে, জনগণ ক্ষমতার মূল উৎস। তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে আছে তারা।
তিনি বলেন, সরকার রাজশাহী জেলা, মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতা ও কর্মীদের অকারণে গ্রেফতার করে মিথ্যা, বানোয়াট মামলায় জেলখানায় পাঠিয়েছে। তিনি গ্রেফতার সব নেতা-কর্মীর মুক্তি এবং সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার বাস্তবায়নে আন্দোলনে রাজশাহী জেলা পুলিশ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকা রহস্যজনক ও বিচিত্র। পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রের বাহিনী। তারা কোনো দলের বাহিনী নয়। বিএনপি মনে করে, এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আগামী দিন থেকে পুলিশ গ্রেফতার বন্ধসহ রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে সহযোগিতা করবে।
আর কোনো নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার না করে এবং মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দেওয়া বন্ধের দাবি জানিয়ে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আমরা আশা করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভোটাধিকার প্রয়োগ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ করে জনগণের দাবির মুখে পদত্যাগ করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনবে।’
মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন করে সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে অসম্মানিত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাই আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও দেশের মানুষ ভোট দিতে যাবেন না।
শীর্ষ নেতাদের নতুন দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার গুঞ্জনের খবর উড়িয়ে দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেছেন, দেশের মানুষ আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে যাবে না।
কয়েক দিন ধরে রাজশাহীতে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা, প্রয়াত বিএনপিদলীয় মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই স্থানীয় বিএনপির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন নতুন দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। ইতিমধ্যে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু বিএনএমের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেছেন। তিনি রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, তিনি বিএনপিতে আছেন। যত দিন বাঁচবেন, বিএনপিতেই থাকবেন। মতিউর রহমানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তার ব্যাপার।’ তবে তাকে কেউ এমন প্রস্তাব দেয়নি বলে দাবি করেন মিনু।
মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে নাদিম মোস্তফা বলেন, হাজার কোটি টাকা দিলেও তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল