রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

খুলনায় উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কিশোর অপরাধ

২৪ ঘণ্টায় পাঁচটি হামলার ঘটনায় জখম ৬, চারজনকে খুলনা মেডিকেলে ভর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

লকডাউনের মধ্যে হঠাৎ খুলনা মহানগরীতে কিশোর অপরাধ মাথা চাড়া দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচটি হামলার ঘটনায় ছয়জনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা যায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহানগরীর সার্কিট হাউস এলাকায় হাসিবুল ইসলাম শাওন (২৪) নামে এক কলেজছাত্রকে ধারালো গুপতি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করা হয়। তার পিঠের ডান পাশে, বুকের বাঁ পাশে, পেটের নিচে ডান পাশে, দুই হাত, পুরুষাঙ্গ ও পায়ে অসংখ্য আঘাত করা হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় তাকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, পূর্বশত্রুতার জেরে ওই স্থানে ডেকে নিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। একই রাতে দৌলতপুর কৃষি কলেজের সামনে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাশিকুল আনাম রাশুকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এর আগে বিকাল ৪টায় পাবলা বণিকপাড়ায় গাজী ইয়াসিন নামে আরেকজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ওই এলাকায় এক কিশোরীকে উত্ত্যক্তের ঘটনায় বাধা দিলে তাকে কোপানো হয়। দৌলতপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক সুব্রত বাড়ৈ জানান, মেয়েলি ঘটনা নিয়ে কথাকাটাকাটি হলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। থানায় মামলার পর একজনকে আটক করা হয়েছে। আলাদা ঘটনায় দৌলতপুর কারিগরপাড়ায় পূর্বশত্রুতার জেরে রিয়াজুল ও বয়রা মোড়ে হামলায় আরও দুই যুবক জখম হন। এ ছাড়া খুলনার দিঘলিয়া উত্তর চন্দনীমহলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, ‘লকডাউনের সময় সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লায় উঠতি কিশোর-যুবকদের আড্ডা বেড়েছে। মাদক বিক্রি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।’ অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রুপ করে বখাটে কিশোররা মাদক সেবন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, খুনের মতো অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া তুচ্ছ ঘটনা সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে বিবাদেও হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। ২০২০ সালে চানমারী বাজার এলাকায় প্রতিপক্ষ গ্রুপের পাল্টা হামলায় স্কুলছাত্র আল ফায়েদ ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। ছুরিকাঘাত করা হয় তার সঙ্গে থাকা শুভ (১৮)-এর দুই পায়ে। ওই হামলার প্রতিশোধ নিতে শিপইয়ার্ড এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জানা যায়, মাদক ব্যবসা, ব্ল্যাকমেইলিং ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের কয়েকটি ঘটনায় কিশোর অপরাধীদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে।

খুলনায় ফায়ার সার্ভিস অফিস ঝুঁকিপূর্ণ : দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে খুলনার নূরনগর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিস ও ফায়ারম্যান ব্যারাক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেখানে সেখানে ছাদের পলেস্তারাসহ খোয়া-সিমেন্ট ভেঙে পড়ছে।

গতকাল সকালে তিন তলা ভবনে দোতলায় ফায়ারম্যান ব্যারাকে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়লে ডুবুরি আবদুর রাজ্জাক (৩৫) গুরুতর আহত হয়। সকাল ৮টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বিছানা পরিষ্কার করার সময় তার গায়ের ওপর ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। আহত অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে একই ভবনে অফিসার ব্যারাক, কম্পিউটার ল্যাব কক্ষের আরও কয়েকটি স্থানে পলেস্তারা ভেঙে পড়ে। সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. সাঈদুজ্জামান বলেন, ষাটের দশকে নির্মিত এই ভবনটি অনেক আগে ব্যবহার অনুপযোগী ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের ছাদ ও বিমে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হলেও পুরো ভবন ধসে পড়তে পারে। আমরা আতঙ্ক নিয়ে অফিস করছি। দুর্ঘটনার পর গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা ভবনটি পরীক্ষা করেছেন। তারা ভবনটিতে বড় ধরনের সংস্কার না করে ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন। জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচতলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, উপ-পরিচালকের দফতর, সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তার অফিস, দোতলায় অফিসার ব্যারাক, ফায়ারম্যান ব্যারাক, ল্যাব ও তিন তলায় আবাসিকভাবে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. আকরাম হোসেন বলেন, ভবনটিতে সংস্কারের জন্য কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের এখনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফায়ার সার্ভিস অফিসের আলাদা একটি ভবনে নব নিযুক্ত ১১৭ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ওই প্রশিক্ষণ শেষ হলে পুরনো ভবনে থাকা ফায়ারম্যানদের ওই ভবনে স্থানান্তর করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর