বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৭ নথির খোঁজ মেলেনি

উদ্ধারে নেই তোড়জোড়

মাহবুব মমতাজী

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চুরি হওয়া ১৭ নথির খোঁজ পায়নি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এমনকি নথি গায়েবের বিষয়ে কোনো ধরনের ক্লুও পায়নি সংস্থাটি। ঘটনার এক সপ্তাহ পর মন্ত্রণালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। তবে সেখানে ঘটনার দিনের কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। এদিকে চুরি হওয়া নথিগুলোর ডুপ্লিকেট তৈরির কথা জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এরপরই নথি উদ্ধারের বিষয়টি কম গুরুত্ব দিয়ে ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে সিআইডি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদে কারও কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কেউই কোনো তথ্য দেয়নি। আবার কেউ কাউকে সন্দেহও করছে না। এ পর্যন্ত ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সামগ্রিক বিষয়ে জানাতে গত ৩ নভেম্বর বিকালে সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সিআইডির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন। এ সময় চুরি হওয়া নথির ডুপ্লিকেট প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এগুলো না পেলেও কোনো সমস্যা হবে না বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তার পরদিনই সিআইডি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ৯ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাদিরা হায়দার স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ১৭ নথি হারিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিনই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে একটি চিঠি দেয় থানা পুলিশ। গতকাল শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার জানান, এখন পর্যন্ত নথি উদ্ধারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। তবে আমরা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। কিন্তু ঘটনার আগের দিন, ঘটনার দিন এবং পরের দিনের কোনো ফুটেজ নেই। এই তিন দিন ছাড়া বাকি সব দিনের ফুটেজ তাদের কাছে এসেছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, গত ৩১ অক্টোবর স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহের পাশাপাশি সন্দেহভাজন হিসেবে ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরদিন আরও তিন কর্মচারীকে আনা হয়। এরা হলেন- বেলাল পলাশ, আবদুল বারী, আয়েশা সিদ্দিকা, জোসেফ সরদার, বাদল, মিন্টু, অহিদ খান, সেলিম ও হাবিব। এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চুরি হওয়া নথিগুলোর তালিকা সংগ্রহ করা হয়। এসব নথিতে কোনো কোনো ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট তাদেরও তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব নথিতে সুবিধাভোগী এবং ভুক্তভোগী উভয়ের খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। আর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের কক্ষের লাগোয়া কক্ষ থেকে নথিগুলো খোয়া যায়। শাহাদৎ হোসাইন সচিবালয়ের ৩ নম্বর ভবনের ২৯ নম্বর কক্ষে বসেন। পাশের লাগোয়া কক্ষে বসেন ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২ কম্পিউটার অপারেটর জোসেফ সরদার ও আয়েশা সিদ্দিকা। ফাইলগুলো ওই দুজনের কেবিনেটে ছিল।

সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, ছায়া তদন্ত এখনো অব্যাহত আছে, তবে কোনো অগ্রগতি নেই।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নথি চুরির ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। আবার জিডির ক্ষেত্রে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা গ্রেফতারের জন্য আদালতের অনুমতি লাগে। যেগুলো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। যাদের সন্দেহের মধ্যে রাখা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। এদেরও অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতারের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি প্রয়োজন।

২০১৮ সালে পাস হওয়া ‘সরকারি চাকরি বিল-২০১৮’ এর একাদশ অধ্যায়ের সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি অপরাধ শীর্ষক ৪১ ধারার উপধারা (১)-এ বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হইবার পূর্বে তাহাকে গ্রেফতার করিতে হইলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর