বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বারবার পকেট কমিটি নিয়ে অঙ্গসংগঠনে অসন্তোষ

ফেনী বিএনপিতে গ্রুপিং তীব্র

ফেনী প্রতিনিধি

ফেনীতে বিএনপির জেলা পর্যায়ের অঙ্গসংগঠনগুলোয় বারবার ‘পকেট কমিটি’ দেওয়ায় চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। ছাত্রদল, যুবদলের পর এবার জেলা কৃষক দলেরও পকেট কমিটি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রদলে পকেট কমিটি দেওয়ার পর থেকে জেলা ছাত্রদল সালাউদ্দিন মামুন-মার্শেদ গ্রুপ ও জাকির হোসেন রিয়াদন্ডদুলাল গ্রুপের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রদলে রয়েছে আরও একাধিক গ্রুপ। এদিকে যুবদলে রয়েছে তিনটি গ্রুপ। এগুলোর নেতৃত্বে আছেন বর্তমান সভাপতি জাকির হোসেন জসিম, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খোন্দকার ও সাংগঠনিক সম্পাদক নঈম উল্লাহ চৌধুরী বরাত। কিছুদিন আগেও ছাত্রদল ও যুবদলের গ্রুপগুলো পৃথক কর্মসূচি পালন করে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি করে দেওয়ার পর থেকে এখন গ্রুপিং প্রকাশ্যে দেখা না দিলেও জেলা বিএনপির দুই যুগ্ন আহ্বায়ক গাজী হাবিব উল্যাহ মানিক ও আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারীর গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। জানা যায়, মূলত তারাই ছাত্রদল ও যুবদলের সিংহভাগের নিয়ন্ত্রণ করছেন। গত ১৮ মার্চ কেন্দ্রীয় কৃষক দল সভাপতি হাসান জাফির তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল ফেনী জেলা কৃষক দলের পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করার পর নতুন করে কৃষক দলেও দেখা দিয়েছে বিভক্তি। নতুন কমিটি দেওয়ার পরও বিবদমান দুটি কমিটি নিজেদের কমিটিই আসল কমিটি বলে দাবি করছে।

কৃষক দলে জেলা সভাপতি করা হয়েছে ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চরচান্দিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসুদ্দিন খোকনকে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কেন্দ্রীয় কৃষক দল নতুন একটি কমিটি ঘোষণা করায় নবগঠিত কমিটিকে নিয়ে জেলাব্যাপী তোলপাড় হয়েছে।

কৃষক দল ও বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করার অভিযোগ তুলেছেন। এ ছাড়া বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের কর্মসূচি পালন করেন বলে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। বিএনপি তাদের গ্রুপিংয়ের কারণে কোনো কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সুন্দরমতো পালন করতে পারে না বলেও জানা যায়।

দলীয় কয়েক নেতা-কর্মী জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্যাগী নেতাদের দ্বারা বিভিন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিলেও কেন্দ্রীয় নেতারা এসব মানছেন না। টাকার বিনিময়ে কমিটিগুলো দেওয়া হচ্ছে বলেও তারা জানান।

ফেনী জেলা বিএনপি ও কৃষক দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করতে সহযোগিতা করার জন্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। অথচ ফেনী জেলা কৃষক দলের কমিটি গঠন করা হলেও মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।

জেলা কৃষক দলের মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ মুহূর্তেও জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক। আমাদের কমিটি ভাঙা হয়নি। দীর্ঘ ২২ বছর সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের পদে আছি। আগের কমিটি বিলুপ্ত না করে কোনোরকম কমিটি করা যায় না। শুনেছি টাকার বিনিময়ে কাউন্সিল ছাড়া কেন্দ্র থেকে একটি পকেট কমিটি তড়িঘড়ি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটি ফেনী জেলা কৃষক দল মানে না।’

নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন খোকন বলেন, ‘আমিই জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘ ৩৫ বছর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রদলে ও যুবদলের শীর্ষপদে ছিলাম। দুবার বিপুল ভোটে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম। জাতীয় নির্বাচনে মোশারফ হোসেনের পক্ষে ধানের শীষের নির্বাচন করে তাঁকে জয়ী করেছি। পরবর্তীতে সোনাগাজী বিএনপির কমিটি বাতিল করা হয়েছে। আমাদের পদপদবি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সেন্টু ভাই, গিয়াস ভাই, পারভেজ ও দোলন চেয়ারম্যানরা কলসি মার্কার পক্ষে নির্বাচন করেছেন, বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন তারা এখন সোনাগাজীতে বিএনপির দায়িত্বে আছেন। বিনিময়ে আমরা আউট। বলা হয়েছে মোশারফের কোনো লোককে সদস্যও করা যাবে না। যারা বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ করে ওপেন বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন তারা পদ পেয়েছেন। বিএনপিতে এ অবস্থাই চলছে। কালাম চেয়ারম্যান, বাবলু, শেখ আনোয়ার উপজেলা বিএনপির সদস্যও নেই। বিএনপির কোনো অভিভাবক নেই। ১৪ বছর আমরা বিএনপির সদস্যও ছিলাম না।’ আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি তো কোনো পদপদবিতেই নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে কীসের লিয়াজোঁ করব? এতদিন আমার কোনো পদপদবি ছিল না। এখনো একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী অঙ্গসংগঠনের কমিটি করার সময় জেলা বিএনপিকে অবহিত করতে হয়। এখানে জেলা কৃষক দলের কমিটি ঘোষণা করার সময় জেলা বিএনপিকে কোনো প্রকার অবহিত করা হয়নি। যুবদল ও ছাত্রদলের গ্রুপিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ছাত্রদল ও যুবদলের কেন্দ্রীয় সংসদকে বলা হয়েছে দ্রুত জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করার জন্য। নতুন কমিটি করা হলে আর কোনো গ্রুপিং থাকবে না।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর