সিলেটে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বাম ধারার রাজনীতি। তাদের এখন চলছে দুর্দিন আর দুঃসময়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, নেতাদের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড, লেজুড়বৃত্তিসহ নানা কারণে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে লেলিন, স্ট্যালিন আর কালমার্ক্সের মতবাদে বিশ্বাসী দলগুলোর। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক বাম দলগুলোও রাজনীতির মাঠ থেকে উধাও। অন্যরাও সুবিধা করতে পারছেন না। আশির দশক ও তৎপরবর্তী সময়ে সিলেটে বাম ধারার রাজনীতির ব্যাপক দাপট ছিল। পীর হবিবুর রহমান ও বরুণ রায়ের মতো কিংবদন্তিতুল্য বাম নেতাদের হাত ধরে এ অঞ্চলে তৈরি হয়েছিলেন অসংখ্য নেতা-কর্মী। ৫ আগস্টের আগে নানা ইস্যুতে সিলেটের মাঠে দেখা মিলত- ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণফোরাম, জাসদ (রব), গণতান্ত্রিক পার্টিসহ বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দলকে। তবে ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, জাসদ ও সিপিবি ছাড়া বাকি দলগুলোর বেশির ভাগের কার্যক্রম ছিল দিবসকেন্দ্রিক। ৫ আগস্টের পর রাজপথ থেকে হাওয়া হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের জোটের শরিকরা। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর শরিক দলগুলোও সিলেটে কোনো ইস্যুতে মাঠে নামার সাহস পায়নি। দলীয় কার্যক্রমও বন্ধ রেখেছেন শরিকরা। ঘরোয়াভাবেও তারা কোথাও বসতে পারেননি। ১৪-দলীয় জোটের বাইরের বাম দলগুলোও খুব বেশি সুবিধা করতে পারছে না রাজপথে। বিভিন্ন সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তারা হাতেগোনা নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিছিল করছেন। সিলেটে বাম রাজনীতি ‘অজনপ্রিয়’ হয়ে ওঠার জন্য যোগ্য নেতৃত্বের সংকটকে দায়ী করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাম রাজনীতিবিদ বলেন, ‘এক সময় সিলেট অঞ্চলে বাম রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছেন পীর হবিবুর রহমান, বরুণ রায় ও হামিদ মিয়ার মতো নেতা। যারা সারাজীবন নিজেরা পরিচ্ছন্ন থেকে খেটে খাওয়া বঞ্চিত মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন।
এখন এরকম নেতা নেই। মানুষ বাম দলের নেতাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। তাই দিন দিন সিলেটে বাম রাজনীতির শক্তি বিলীন হতে চলছে।’
৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন ইস্যুতে সিলেটে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকা বাম দলগুলোর মধ্যে একটি ছিল ওয়ার্কার্স পার্টি। বর্তমানে এই পার্টিও গুটিয়ে নিয়েছে কার্যক্রম। এ প্রসঙ্গে দলটির পলিট ব্যুরো সদস্য ও সিলেট জেলা সভাপতি সিকন্দর আলী জানান, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর থেকে কার্যক্রম নেই। নেতা-কর্মীরাও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনীতি করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় কোনো ইস্যুতে দলটি কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। কেন্দ্র থেকেও কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি।
বাসদ সিলেটের জেলা আহ্বায়ক আবু জাফর জানান, জাতীয় ও স্থানীয় নানা ইস্যু নিয়ে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে সংগঠনটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বলে জানান তিনি।