গোটা বিশ্বের সাথে নভেল করোনাভাইরাসে কাঁপছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গও। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি জানিয়ে দিলেন, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোন মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাস মেলেনি।
করেনা ভাইরাস মোকাবিলায় শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নে এক জরুরি বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘রাজ্যে কারও শরীরে করোনাভাইরাস মেলেনি। তাই আতঙ্কিত হবেন না।’
একটি পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, ‘বিভিন্ন চেকপোস্ট ও বিমানবন্দরের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত ১,৪২,৮১১টি স্ক্রিনিং করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত চীন, হংকং, জাপান, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ ১৯ রাষ্ট্র থেকে ১৫৪১ জন পর্যটক রাজ্যে এসেছেন। তাদের চিহ্নিত করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে আবার ২৩৪ জনকে আসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। কিন্তু একটিও পজিটিভ কেস পাওয়া যায়নি।’
সব জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলেই তা যে করোনা নয় সেকথাও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিমত, এমনিতেই সারা বছর ধরে হাঁচি, কাশি বা শ্বাসকষ্ট লেগে থাকে। তাই এতটা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে সকলে ভাল ও সুস্থ থাকে।’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গ হল উত্তরপূর্ব ভারতের গেটওয়ে এবং নেপাল, বাংলাদেশ ও ভুটানের সীমান্ত। পেট্রাপোল, রাধিকাপুর, চ্যাংরাবান্দা, ফুটসেলিং, গেদে, আমাদের অনেকগুলো স্থলবন্দর চেকপোস্ট আছে-সেই সমস্ত জায়গায় স্ক্রিনিং বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
বিদেশি যাত্রীদের ওপর নজর রাখার জন্য কলকাতা বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক অন্তঃদেশীয় বিমানেও চেকিংএর ব্যবস্থা রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তাঁর অভিমত, অনেকেই আন্তর্জাতিক বিমানে এসে দেশের অন্য জায়গায় কয়েকদিন বিরতি নিয়ে তিনি অন্তঃদেশীয় বিমানে এ রাজ্যে এলে তাকে চিহ্নিত করাটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
যৌথভাবে এই বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে একযোগে রাজ্য সরকার করবে বলেও জানান তিনি। এজন্য রাজ্য সরকারের তরফে একটি কলসেন্টার ও হেল্প লাইন খোলা হয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলোতে কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড রাখা হয়েছে।
করোনার হাত থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষকে বেশ কিছু সতর্কতা নেওয়ার আবেদনও জানান মুখ্যমন্ত্রী। যার মধ্যে রয়েছে বারবার হাত ধুয়ে ফেলা, ঠিক সময়ে চিকিৎসকদের কাছে যাওয়া, হাঁশি-কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করা, জ্বর হলে অন্তত ১৪ দিন বিশ্রাম নেওয়া, টিস্যু ব্যবহার করার পর তা ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া।
অন্যদিকে, করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সুযোগ নিয়ে ওষুধ, মাস্কের কালোবাজারি ঠেকাতে পুলিশকে নজরদারি চালানোরও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতা পুলিশ কমিশনার, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, রেল, অসামরিক বিমান পরিবহন, পোর্ট, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারাও। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বৈঠকে যোগ দেন জেলা শাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও জেলার স্বাস্থ্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব