বাংলাদেশে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা জনবান্ধব করার লক্ষ্যে আইনি সংস্কার ও করের বোঝা না বাড়িয়ে করের পরিধি সম্প্রসারণ ও করদাতাদের প্রণোদনা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সরকারের রাজস্ব আহরণ হচ্ছে উন্নয়নের অক্সিজেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য রাজস্ব আহরণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো হচ্ছে। সবাই মিলে কর প্রদানকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে দেশকে আরও বেশি স্বনির্ভর করা সম্ভব। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশে আয়কর আদায়ে পরিধি কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতি বছর কর মেলার মাধ্যমে জনগণকে কর প্রদানে উৎসাহিত করা হলেও কর ব্যবস্থাপনা এখনো পুরোপুরি জনবান্ধব বলে মনে করা হয় না। এমনই এক প্রেক্ষাপটে বুধবার রাজধানীর এফডিসিতে কর ব্যবস্থাপনাকে জনবান্ধব করতে করণীয় নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ছায়া সংসদের আদলে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় সরকারি 'ল' হিসেবে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ও বিরোধী দল হিসেবে বাংলাশে টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি অংশগ্রহণ করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজস্ব বোর্ডের সদস্য জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এবারের কর মেলায় সফল হয়েছে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ মেলায় স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে প্রমাণ করেছে কর ব্যবস্থাপনা দিনে দিনে সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমাদের ছোট্ট একটা দেশে অনেক লোককে ম্যানেজ করে কর আহরণসহ সর্বক্ষেত্রে কর্ম পরিকল্পনা করতে হয়। তাই মাঝে মাঝে কর আহরণে সাময়িক অসুবিধা হলেও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাজস্ব বোর্ড সক্ষম।
কর প্রশাসন কর ফাঁকিবাজদের চিহ্নিত করার জন্য তরুণদের খণ্ডকালীন চাকরিতে নিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে।
তিনি আরও বলেন, কর প্রদান ছাড়া সম্পদের বৈধতা অর্জন সম্ভব নয়। তাই কর প্রদানের মাধ্যমে সততার সঙ্গে মাথা উঁচু করে সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া উচিত। ধনী দ্রারিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও রাজস্ব আহরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণের আওতা বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমে চৌধুরী কিরণ বলেন, মানুষের মধ্যে যে করভীতি রয়েছে, সে ভীতির করার জন্য কিভাবে কর ব্যবস্থাপনাকে আরও সহজ করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কর নিরূপন ও কর আয় প্রক্রিয়া সহজ ও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে কর গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষকে কর প্রদানকারীর সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। তাহলেই কর আদায়ের পরিধি বাড়ানো সহজ হবে। অসৎ কর কর্মকর্তাদের দ্বারা যাতে কোন সম্মানিত করদাতা হয়রানির স্বীকার না হয় সেদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মানিত মেম্বার মহোদয় বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন বলে অনুরোধ করেন জনাব কিরণ।
একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি আদালতে ঝুলে থাকা কর ফাঁকিবাজদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা করে মামলাসমূহ দ্রত নিষ্পত্তি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে কোন কর ফাঁকিবাজ যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে এক কোটির বেশি মানুষ কর দেওয়ার সামর্থ্য রাখলেও মাত্র ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ কর প্রদান করছে। আমাদের জাতীয় আয়ের ৩০ শতাশং রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা কিন্তু সেখানে মাত্র আমরা ৯% আদায় করতে পারছি।
বিশেষ করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নানা রকম কারসাজিতে আমাদের কর ব্যবস্থা অন অভিজ্ঞতার কারণে ব্যাপক হারে কর ফাঁকি দিচ্ছে। কর কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে লাল, হলুদ ও সবুজ এ তিন শ্রেণিতে চিহ্নিত করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া আয়করের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করে কর আদায়ে নজরদারি আরও বাড়ানোর কথাও তিনি উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারীদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক শামীমা দোলা, সাংবাদিক রিয়াদ হোসেন, সৈয়দ এ মোমেন ও মেহেদী হাসান তামিম।
বিডি প্রতিদিন/২৮ নভেম্বর ২০১৮/আরাফাত