করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে বিমানের ফ্লাইট বা উড্ডয়ন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, আর মানুষও ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। চলতি ২০২১ সালেও সেই অনিশ্চয়তা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মাস্টারকার্ড আজ ‘রিকভারি ইনসাইটস: রেডি ফর টেকঅফ?’ শীর্ষক একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে আকাশপথ ও স্থলপথে ভ্রমণের বর্তমান বৈশ্বিক প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে। মাস্টারকার্ড বলেছে, বিশ্বব্যাপী মানুষের ভ্রমণের প্রবণতা এখনো আগের অবস্থায় ফিরে যায়নি। তবে প্রতি ৫টির মধ্যে ১টি দেশে ডমেস্টিক ফ্লাইট বা অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে বিমানে ভ্রমণের প্রবণতা কোভিড- ১৯ মহামারি শুরু হওয়ার আগের অবস্থার প্রায় ৯০ শতাংশে ফিরেছে। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ার ১১৬ শতাংশ বুকিং নিয়ে বৈশ্বিক গড় হিসাবকে ছাড়িয়ে গেছে।
মাস্টারকার্ডের বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ভ্রমণের দেশভিত্তিক ও সমন্বিত বৈশ্বিক প্রবণতা এবং তা আরো জোরদারের সম্ভাবনা ও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবকাশ ও ব্যবসা, স্থানীয় ও দূরবর্তী গন্তব্যে চলাচল এবং সঞ্চয় ও ব্যয়ের মধ্যকার ভারসাম্য দিনদিন জোরদার হচ্ছে। এতে দেখা যায়, ভ্রমণে মানুষের ব্যয় বাড়ছে, যা পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত বহন করে।
চিফ ইকোনমিস্ট, এপি অ্যান্ড এমইএ অব দ্য মাস্টারকার্ড ইকোনমিক্স ইন্সটিটিউট, ডেভিড ম্যান বলেন, ‘যদিও এশিয়া প্যাসিফিকের অনেক দেশে এখনো আন্তর্জাতিক সীমান্ত উন্মুক্ত হয়নি। তবে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত লক্ষ করা যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ভ্রমণের সুযোগ উন্মুক্ত হতে শুরু করেছে, মাস্টারকার্ড মনে করে, এশিয়া প্যাসিফিকের দেশগুলোও সতর্কতার সঙ্গে ধীরে ধীরে সীমান্ত উন্মুক্ত করে ব্যবসা ও অবকাশযাপনকেন্দ্রিক প্রয়োজনীয় ভ্রমণের ক্ষেত্রে একইপথ অনুসরণ করবে।’
প্রতিবেদনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত:
• বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক ভ্রমণের তুলনায় অবকাশযাপনকেন্দ্রিক ভ্রমণের হার এখনো খুব কম। তবে বিশ্বব্যাপীই ব্যবসায়িক ভ্রমণে ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটছে। এক্ষেত্রে অবশ্য অস্ট্রেলিয়া অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে। দেশটির কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ইতিমধ্যে কোভিডের আগের অবস্থার প্রায় ৮০ শতাংশে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রমণ আয়োজনের হার ২০১৯ সালের অবস্থার ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন সব দেশেই অবকাশযাপনকেন্দ্রিক ভ্রমণের চেয়ে ব্যবসায়িক ভ্রমণ বাড়ছে, সীমান্ত উন্মুক্ত হলে যা ক্ষতি কাটিয়ে উঠারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
• বিশ্বে গ্যাসোলিন তথা জ্বালানি তেলের জন্য ব্যয় ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ যে পর্যায়ে ছিল এখন তার চেয়ে ১৩* শতাংশ বেশি ব্যয় হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ স্থলপথে ভ্রমণ বেড়েছে, জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। সিঙ্গাপুর, হংকং, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়ার মার্গারেট রিভার ও ডানসবোরো’র মতো এলাকায় স্থানীয় দর্শনার্থীর আনাগোনা বেড়েছে।
• লকডাউনের পরে মানুষের চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ায় পরচুলা ও টুকরো পরচুলা বিক্রির স্টোরগুলোতে বিক্রি মহামারির আগের তুলনায় গত বছর ৮১% বেড়েছে। বিক্রি বেড়েছে বিউটি স্যালুন ও লাগেজ স্টোরেও। সেইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী বোট বা নৌযান বিক্রি ৩০ শতাংশ বেশি হয়েছে। বাইক বা সাইকেল বিক্রি তো ৬২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। করোনাকালে সরকার আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ায় এবং চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকা কারণে অনেকেই সঞ্চয় করতে পেরেছেন।
মাস্টারকার্ডের প্রেসিডেন্ট অব ডেটা অ্যান্ড সার্ভিসেস রাজ শেষাদ্রী বলেন, ‘পরিবার-পরিজনসহ দেশ-বিদেশে থাকা বন্ধু-স্বজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা এবং ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলাটা কত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা গত বছরে বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘পর্যটন খাতের অর্থনৈতিক প্রভাব সুবিস্তৃত। কার্যত ভ্রমণকারী তথা পর্যটকরা ঘরে বসে থাকলে সব খাতেই কমবেশি প্রভাব পড়ে। রিকভারি ইনসাইটস শিরোনামের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোকে ট্রাভেল রুট বা ভ্রমণ গন্তব্যসমূহ নিয়ে নতুন ডিজাইন তৈরি করার ব্যাপারে সহায়তা করেছি। তাই তাদের এখন অধিকতর বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে তারা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সব সময়েই উপকৃত হতে পারে।’
সরকারগুলোর পাশাপাশি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও যাতে দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কোভিড- ১৯ এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্যই মাস্টারকার্ড রিকভারি ইনসাইটস শিরোনামের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটির মাধ্যমে মাস্টারকার্ড মূলত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন এবং সেই সাথে বিশ্লেষণও তুলে ধরেছে। এর ফলে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও সরকারগুলো বুঝতে পারবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা কেমন হয়েছে এবং সে অনুযায়ী তারা নিজেদের করণীয়ও নির্ধারণে জোর দিতে পারবে।
উদাহরণস্বরূপ, গত বছরের প্রথম দিকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি শীর্ষস্থানীয় বিমানসংস্থা ‘মাস্টারকার্ড টেস্ট অ্যান্ড লার্ন’ প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা হাতে নেয়। মাস্টারকার্ডের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সাত দিনের চেয়ে বেশি সময়ের ভ্রমণ প্রবণতা দুই-তৃতীয়াংশ বাড়ছে এবং ভ্রমণের কয়েক মাস আগে টিকিট কেনার প্রবণতা প্রায় অর্ধেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাস্টারকার্ডের ওই বিশ্লেষণে আস্থা রেখে বিমান সংস্থাটি তাৎক্ষণিকভাবে কৌশল পুনর্বিন্যাস করে এবং ভ্রমণকারীদের অধিকতর উন্নত সেবা প্রদানের পরিকল্পনা হাতে নেয় যাতে তাদের টিকিট বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও ভোক্তারা যাতে সহজ ও সাবলীল উপায়ে সেবা ও মর্যাদা পান সেটি নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে মাস্টারকার্ড কাজ করে চলেছে:
• মাস্টারকার্ড ট্রাভেল অ্যান্ড লাইফস্টাইল সার্ভিসেস ভোক্তাদের প্রয়োজন তথা চাহিদা, পছন্দ ও সন্তোষজনক অভিজ্ঞতা অর্জন এসব বিষয়ে জোর দিয়ে ট্রাভেল বা ভ্রমণ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বুকিংয়ের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে থাকে।
• মাস্টারকার্ড সবচেয়ে সস্তা দামে অর্থাৎ সবচেয়ে কম খরচে হোটেল বুকিং নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্রাহকের হোটেলে অবস্থানের গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। সেই সঙ্গে ভ্রমণ বাতিল, লাগেজ হারানো, রাইড শেয়ার প্রটেকশন, গাড়ি ভাড়া করাসহ বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করে। এভাবে সর্বোত্তম সেবা প্রদানের মাধ্যমে মাস্টারকার্ড তার গ্রাহকদের মনে দারুণ প্রশান্তি এনে দেয়, যা তাঁরা সব সময় পেতে চান ও এজন্য অর্থ ব্যয় করেন।
• মাস্টারকার্ড প্রাইসলেস.কম ট্রাভেলাদের মাস্টারকার্ড ট্রাভেল রিওয়ার্ডস ও বিভিন্ন ভ্রমণ গন্তব্যে নানা রকমের অফার বা সুবিধাসহ কাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা দিয়ে থাকে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই