শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

লোকসানে দিশাহারা কাঁকড়া চাষিরা

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

লোকসানে দিশাহারা কাঁকড়া চাষিরা

চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণে চীনসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র আমদানি স্থগিত রাখায় রপ্তানির অভাবে শুধু বরগুনার পাথরঘাটাতেই গত বছর ২০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কাঁকড়া চাষিরা। কাঁকড়া চাষ করে রপ্তানি না করতে পারায় লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে জানান চাষিরা। পাথরঘাটার চাষিদের কাঁকড়া চীন, থাইল্যান্ড, তিউনিসিয়ায় রপ্তানি হতো। অনেকেরই সচ্ছলতা হয়েছিল কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে। করোনার কারণে সে কাঁকড়া আলোর মুখ দেখেনি। সে কারণে প্রত্যেক চাষি লোকসানের মুখে পড়ায় এ পেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। হতাশায় দিন কাটছে কাঁকড়া চাষিদের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর পূর্ণাঙ্গ কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারায় ২০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে এ উপজেলার পাঁচ শতাধিক চাষির। চাষিরা জানান, গত দুই বছর আগে স্ত্রী কাঁকড়া ২ হাজার ৯৫০ টাকা ও পুরুষ কাঁকড়া ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সেই কাঁকড়া স্থানীয় বাজারে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের প্রবীণ কাঁকড়া চাষি মনোতোষ জানান, তিনি ১৮ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। গত দুই বছর লোকসানে পড়ে এ বছর হিমশিম খেতে হচ্ছে। এত বড় লোকসান এই প্রথম। কাঁকড়ার আড়তদার চৈতি ট্রেডার্সের সমির চন্দ্র বেপারি জানান, গত বছর কাঁকড়ায় চাষিরা লোকসানে পড়ায় এ বছর অনেক পুকুরে কাঁকড়ার চাষ হয়নি।  উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নে উত্তম মজুমদারের ১ একর জমিতে নির্মিত ঘেরে প্রতি বছর আড়াই হাজার কেজি কাঁকড়া চাষ করতেন। তিনি বলেন, পরপর দুই বছর লোকসানের মুখে পড়ায় এ বছর কাঁকড়া চাষ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা পাই তাহলে সামনে আগাতে পারব। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে উপজেলার মনোজ ব্যাপারী, তপু, কিশোর, মহিন্দ্র, জোৎস্না রানী ও শিল্পী রানীসহ শতাধিক উদ্যোক্তা জানান, মৎস্য বিভাগের পরামর্শে আবারও ঝুঁকি নিয়ে কাঁকড়া চাষ করছি। তবে এবারেও যদি চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকে তাহলে ভিটেমাটি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, গত দুই বছর যে কাঁকড়া চীন, থাইল্যান্ড, তিউনিশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে সে কাঁকড়া গত বছরে পানি থেকে আলোর মুখ দেখেনি। ফলে এ পেশায় আগ্রহ হারাতে বসেছেন অনেক চাষি। এ জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলিটেটর (ইউডিএফ) স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জাইকার উদ্যোগে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। ইউএনও হোসাইন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ জানান, আন্তর্জাতিকভাবে করোনার জন্য বাজার খারাপ হওয়ার কারণে এর প্রভাব আমাদের দেশে পড়েছে। সংকটের সামাল দিতে চীনের বিকল্প দেশের খোঁজ করতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অতি শিগগিরই এ সংকট কেটে যাবে বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর