মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

সারের কৃত্রিম সংকট

আমতলী প্রতিনিধি

সারের কৃত্রিম সংকট

কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে উচ্চমূল্যে সার বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমতলী ও তালতলীতে ১৬ টাকা কেজির ইউরিয়া সার ১৮-২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার সি এম রেজাউল করিম ও বিসিআইসি ডিলারদের দাবি সারের সংকট নেই। খুচরা ডিলারের দাবি বিসিআইসি ডিলাররা সার দিচ্ছে না। কিন্তু বেশি টাকা দিয়েও কৃষকরা সার পাচ্ছেন না। সেপ্টেম্বর মাসের বরাদ্দকৃত সার দুই উপজেলায় এলেও সার খুঁজে পাচ্ছেন না কৃষকরা। অভিযোগ রয়েছে বিসিআইসি ডিলাররা উচ্চমূল্যে সার অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে আমতলী ও তালতলীতে সারের সংকট দেখা দিয়েছে। দ্রুত সারের কৃত্রিম সংকট ও উচ্চমূল্যে সার বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। জানা গেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে আমতলীতে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং তালতলীতে ১৬ হাজার ২৯০ হেক্টর। ওই জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে দুই উপজেলায় ১ হাজার ৩৭৮ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার প্রয়োজন। এর মধ্যে আমতলীতে ৯৭৮ মেট্রিক টন এবং তালতলীতে ৪০০ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত গত সেপ্টেম্বর মাসের চাহিদার বিপরীতে আমতলীতে ৯০৬ মেট্রিক টন এবং তালতলীতে ৩৬৫ মেট্রিক টন সার এসেছে। এদিকে চাহিদা থাকায় উপজেলা কৃষি অফিসার সি এম রেজাউল করিম অক্টোবর মাসের জন্য দুই উপজেলায় ৬১১ মেট্রিক টন সারের চাহিদা দিয়েছেন। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন সার আসলেও সংকট কাটছে না। কৃষকরা সার নিতে এসেও সার পাচ্ছেন না। উপজেলা কৃষি অফিসার সি এম রেজাউল করিম ও বিসিআইসি ডিলারদের দাবি সারের সংকট নেই। খুচরা ডিলারের দাবি বিসিআইসি ডিলাররা সার দিচ্ছেন না। কিন্তু বেশি টাকা দিয়েও কৃষকরা সার পাচ্ছেন না। অভিযোগ রয়েছে বিসিআইসি ডিলাররা উচ্চমূল্যে সার অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে আমতলী ও তালতলীতে সারের সংকট দেখা দিয়েছে। দ্রুত সারের কৃত্রিম সংকট ও উচ্চমূল্যে সার বিক্রি বন্ধ করে সার সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

জানা গেছে, উপজেলা শহর ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ইউরিয়া সারের সংকট রয়েছে। বিসিআইসি ডিলার ও খুচরা ডিলাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে সার বিক্রি করছে। ১৬ টাকার ইউরিয়া সার ১৮-২২ টাকায় বিক্রি করছে। ৫০ কেজির ৮০০ টাকার সার ৯০০-১১০০ টাকায় বিক্রি করছে। কৃষকরা বিসিআইসি সার ডিলারদের কাছে গিয়ে সার পাচ্ছেন না। আবার তারা বেশি টাকায় গোপনে সার বিক্রি করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন গত তিন দিন পূর্বে তালতলীতে বেশ কয়েকটন সার এক ডিলার বেশি দামে বিক্রি করেছেন। গতকাল আমতলী পৌর শহরের এ কে স্কুল, পোস্ট অফিস সড়ক, পুরাতন বাজার, বাঁধঘাট চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকার খুচরা ডিলারের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাদের দোকানে সার নেই। কিছু দোকানে দুই-এক কেজি সার থাকলেও তা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অপর দিকে গুলিশাখালী ইউনিয়নে বিসিআইসি ডিলার মো. ওহাব মিয়ার খেকুয়ানী গুদামে সার থাকলেও তার লোকজন কৃত্রিম সার সংকট দেখিয়ে দুজন খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করাচ্ছেন। কৃষকরা সারের জন্য গুদামে গেলেও সার নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন এমন অভিযোগ কৃষকদের। বৈঠাকাটা গ্রামের কৃষক মাসুম গাজী ও জাফর গাজী বলেন, তিন দিন ঘুরেও আমতলী পৌর শহরের কোনো দোকানে সার পেলাম না। শেষ সময়ে কী করব ভেবে পাচ্ছি না? চন্দ্রা পাতাকাটা গ্রামের আজিজ হাওলাদার বলেন, ‘গত পাঁচ দিন আগে মুই ১০ কেজি সার কিনছি ২১০ টাহায়। অ্যাহোন মোর আরও ১০ কেজি সার লাগে কিন্তু মুই কোনোহানে পাইতেছি না। অনেক সারের দোহান খুঁজছি। দোহানদারে কয় বড় ডিলাররা সার দেয় না, মোরা আপনেগো সার দিমু কোম্মেগোনে।’ পাতাকাটা গ্রামের এনামুল হক বলেন, অগ্রিম টাকা দিয়েও এক বস্তা সারের জন্য চার দিন ধরে ঘুরছি কিন্তু পাচ্ছি না। আঠারোগাছিয়া গ্রামের কৃষক কুদ্দুস হাওলাদার ও কালাম হাওলাদার বলেন, ৯০০ টাকা ধরে ৫০ কেজির বস্তা সার কিনেছি। পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, বিসিআইসি ডিলাররা বলেন সার আসেনি। খুচরা ডিলাররা বলেন বিসিআইসি ডিলাররা সার দেয়নি। আবার গোপনে ডিলার গলাচিপা উপজেলার কৃষকদের কাছে বেশি টাকায় সার বিক্রি করছে। কিন্তু সাধারণ কৃষকরা সার পাচ্ছেন না। দ্রুত বেশি দামে সার বিক্রি বন্ধ ও কৃত্রিম সংকট নিরসনের দাবি জানান তিনি।   আমতলী এ কে স্কুলের খুচরা ডিলার মো. নাজমুল স্টোরের ম্যানেজার আবদুল মান্নান বলেন, গত ১ অক্টোবর বিসিআইসি ডিলার ৭০ বস্তা সার দিয়েছিল তা এক দিনে বিক্রি করে ফেলেছি। গত তিন দিন ধরে সার নেই। বিসিআইসি ডিলার সার দিচ্ছে না। কৃষকরা সার নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে। আমতলী পোস্ট অফিস সড়কের খুচরা ডিলার আজাহার মিয়া বলেন, গত তিন দিন ধরে বিসিআইসি ডিলার সার দেননি। অনেক কৃষক সার নিতে আসলেও দিতে পারছি না।  গুলিশাখালী বিসিআইসি সার ডিলার মো. ওহাব মিয়া কৃত্রিম সারের সংকট ও বেশি দামে সার বিক্রির কথা অস্বীকার করে বলেন, ইউরিয়া সারের কোনো সংকট নেই। সব খুচরা ডিলারের কাছে প্রয়োজন মতো সার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।  আমতলী বিসিআইসি সার ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মহিউদ্দিন মিয়া ইউরিয়া সারের সংকটের কথা অস্বীকার করে বলেন, গ্রামে কিছু লোকে গোপনে বেশি দামে সার বিক্রি করতে পারে। কিন্তু উপজেলা শহরে কেউ বেশি দামে সার বিক্রি করছে না। তালতলী বিসিআইসি ডিলার মো. খলিলুর রহমান বলেন, তালতলীতে সার না থাকায় তিন দিন আগে আমতলী উপজেলা থেকে খুচরা ডিলাররা কিছু সার এনে বিক্রি করেছেন। ওই সার বেশি দামে বিক্রি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, কিছুটা সংকট থাকলেও মঙ্গলবারের মধ্যে সার পৌঁছে যাবে। তখন আর সার সংকট থাকবে না।  আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, হলদিয়া ও উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের কৃষকরা সার পাচ্ছেন না। তাদের অন্য স্থান থেকে সার কিনতে হচ্ছে। ওই দুই গ্রামে সারের সংকট রয়েছে। আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সি এম রেজাউল করিম বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের ইউরিয়া সারের চাহিদার প্রায়ই এসেছে অল্প কিছু সার বাকি আছে। যে সার এসেছে তাতে সারের সংকট থাকার প্রশ্নই আসে না। তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কেউ বেশি দামে সার বিক্রি করে থাকে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার হোসেন বলেন, আমতলী ও তালতলীতে যথেষ্ট সার মজুদ আছে। সারের কোনো সংকট নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর