বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

উন্নয়নের মহাসড়কে মেহেরপুর

মাহবুবুল হক পোলেন, মেহেরপুর

উন্নয়নের মহাসড়কে মেহেরপুর

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, জনশক্তি রপ্তানিসহ বিভিন্ন উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে মেহেরপুর। এ উন্নয়নে মেহেরপুর বাসীর চোখ জ্বল জ¦ল করছে আশার আলোতে।  মুজিবনগর স্থলবন্দর, স্বাধীন বাংলা রেডিও স্টেশন দর্শনা টু মুজিবনগর রেলপথ, আমঝুপি থেকে মুজিবনগর কেদারগঞ্জ বাইপাস সড়ক নির্মাণ, ভৈরব ও কাজলা নদী খনন, মেহেরপুর সরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু, মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স কোর্স চালু, মুজিবনগর ডিগ্রি কলেজকে জাতীয়করণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মুজিবনগর প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জেলার আর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্বই পাল্টে যাবে। ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরের যে সড়ক দিয়েই জাতীয় চার নেতাসহ ভারতীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ শপথ নিয়ে দেশের প্রথম সরকার গঠন করেছিলেন, সেই পথটিতেই হচ্ছে স্থল বন্দর। স্থল বন্দরের কার্যক্রম শুরুর হলে এ জেলার বেকারদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও সঙ্গে সঙ্গে আর্থনৈতিক চাকাও সচল হবে। মেহেরপুরের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার আসছে পরিবর্তন। দর্শনা থেকে দামুড়হুদা এবং মুজিবনগর হয়ে মেহেরপুর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের জন্য ১২ কোটি টাকার একটি প্রাক্কলন (সমীক্ষা) অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পে রয়েছে ব্রডগেজ লাইন, ব্রিজ, স্টেশন, ইয়ার্ড, সিগন্যালিং, অপারেশন প্রভৃতির কনসেপচুয়াল ড্রইং ও ডিজাইন। আমঝুপি থেকে মুজিবনগর কেদারগঞ্জ বাইপাস সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দর্শনা-মুজিবনগর আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। মেহেরপুরের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নীতকরণে ৪ লেন রাস্তাসহ রাস্তার সম্প্রসারণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। চলতি বছরের পহেলা জুন মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ লেন রাস্তাসহ রাস্তার সম্প্রসারণের মানোন্নয়নে ৬৪৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। এটির মোট দৈর্ঘ্য ১২০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার, এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে মেহেরপুরের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ায় কৃষিতে যেমন ব্যাপক ভূমিকা রাখবে সেই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ঘটবে, গড়ে উঠবে শিল্প কারখানা। ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মেহেরপুরের ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ কাজ চলছে।

এ হাসপাতালটিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রূপান্তরে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মেহেরপুর নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ কাজ চলছে। ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মেহেরপুরে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (পিটিআই) ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মেহেরপুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের জন্য ৮০ লাখ টাকা সমমূল্যের ৩২ শতক খাস জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। আধুনিক ভবনসহ যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। যেখানে বেকার যুবকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে শেখ কামাল আইটি পার্কের। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) এর মাধ্যমে এ বছর সরকারিভাবে ১ হাজার জনশক্তিকে সৌদি আরবে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন হলে মেহেরপুরবাসীর জন্য একটি মাইল ফলক হবে। মেহেরপুরের ২টি পৌরসভায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর অধীনে ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক, ড্রেন, কাঁচাবাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জায়গা নির্ধারণ ও সমীক্ষার কাজ শুরুর হয়েছে। মেহেরপুরে একটি ইনডোর স্টেডিয়াম ও ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। মুজিবনগর কমপ্লেক্সে হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ নির্মাণ করা হবে একটি আধুনিক মানের পর্যটন কেন্দ্র, দৃষ্টিনন্দন লেক, একটি মিনি পার্ক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মিউজিয়াম, সিনেপ্লেক্সসহ আরও অনেক কার্যক্রম। এরই মধ্যে সম্প্রসারণের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কাজ শুরু হয়নি। ভৈরব নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ৭১ কোটি ৬৫ লাখ ৫১ হাজার ২১৬ টাকা ব্যয়ে প্রথম পর্যায়ের খনন কাজ শেষ করা হয়েছে। যার সুফল পাচ্ছে  জেলাবাসী। ২য় পর্যায়ে ৩০ কিলোমিটার খননেরও প্রক্রিয়া চলছে।

সর্বশেষ খবর