বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বগুড়ায় নদী ভাঙনে ভোটের প্রচারণায় ভিন্ন জেলায়

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় নদী ভাঙনে ভোটের প্রচারণায় ভিন্ন জেলায়

বগুড়া সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের অধিকাংশ ভোটার বাস করছেন ভিন্ন জেলায়। যমুনা নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা সেসব জেলা ও উপজেলায় আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ইউনিয়নের নির্বাচনের প্রার্থীরা। ভোটার তালিকায় নাম ঠিকানা থাকলেও বাস করছেন প্রতিবেশী জেলায়। ইউনিয়নের নির্বাচনের প্রার্থীদের নিজ এলাকা ছেড়ে ভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রচার প্রচারণা চালাতে হচ্ছে। ভোটাররা নিজ এলাকায় না থাকায় ভোটার এলাকার পুনর্বিন্যাসের আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী। জানা যায়, জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডটি ফাজিলপুর গ্রামের ভোটারদের নিয়ে গঠিত। এ গ্রামটি গত ২০১৬ সালে নদীভাঙনে যমুনাগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে। ওয়ার্ডটির সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৫৫০ জন। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে অধিকাংশ ভোটাররা এখন গাইবান্ধা জেলার সাঁঘাটা, গাইবান্ধা সদর এবং জুমারবাড়ীতে বসতবাড়ি গড়েছেন। এলাকাটির ইউপি সদস্য আবদুল হাই বলেন, আসছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা চালাতে তাকে বাইরের জেলায় যেতে হবে। সেখানেই মাইকিং করে ভোট প্রার্থনা করতে হবে। আবার ভোটারও ভোট দিতে তেমন একটা আগ্রহ নয়। পয়সা খরচ করে ভোটার নিয়ে আসতে হয়। দূরের পথ হওয়ায় তখন খরচ বেড়ে যায়। ২ নম্বর ওয়ার্ডটি বওলাডাঙ্গা গ্রামের ভোটারদের নিয়ে গঠিত। এ গ্রামটি গত ২০১৭ সালে যমুনাগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে। ওয়ার্ডটির সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৯৫০ জন। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এ এলাকার ভোটাররা বেশির ভাগ জেলার শেরপুর উপজেলার নয়মাইল, পানিতলা এবং গাড়িদহ এলাকায় বাড়িঘর করেছেন। এ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম জানান, নিজের এলাকা ছেড়ে ভোট প্রার্থনা করতে বাইরের এলাকায় যেতে হবে। বাইরের এলাকাতেই নির্বাচনের পোস্টার লাগাতে হবে। ইউনিয়নের আউচারপাড়া, চর চালুয়াবাড়ী এবং সুজালীপাড়ার ভোটারদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ১০০ জন।

 এদের মধ্যে ৭০০ জন ভোটার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে পার্শ্ববর্তী সোনাতলা উপজেলার চরপাড়া, কলেজ স্টেশন এবং শেরপুর পানিতলায় বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন। এ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম বলেন, বাইরের এলাকা হতে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসতে চায় না। তাদের বুঝিয়ে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে অনেক অর্থ অপচয় হবে। এমনিভাবে ভেঙে গেছে শিমুলতলা, ভাঙ্গরগাছা, তেলিগাড়ী, চরদলিকা, হাটবাড়ীচর। এসব এলাকার আরও প্রায় ৮০০ ভোটার চলে গেছে সোনাতলা উপজেলার সুখানপুকুর ও জামালপুর জেলার ইসলামপুরের কালিরচর, চর নোয়ারপাড়া এলাকায়। এলাকায় বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন। তারা নদী ভাঙনের ফলে এলাকায় আর ফিরেও আসতে পারছে না। চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের ভোটার মজিবর মন্ডলের পুত্র মো. শামসুল হক জানান, নদী ভাঙনে সব হারিয়ে গাইবান্ধা জেলার সাঁঘাটার কাটুরি গ্রামে বসবাস করছেন। নাগরিকত্ব, জন্মনিবন্ধন, প্রত্যয়নপত্রসহ ইউনিয়নের নানা কাজে এখনো চালুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হয়। এতদূর হতে ভোট দিতে যাওয়াটাও কষ্টকর হয়ে যায়। নতুন করে ভোটার এলাকা নির্ধারণ করা জরুরি। সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জানান, ইউনিয়নের সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে অধিকাংশ ভোটাররাই বাইরের বিভিন্ন জেলায় বসবাস করছেন। ভোট কেন্দ্রের সীমানা পুনর্বিন্যাসের জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলার নির্বাচন অফিসার মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, এ বিষয়ে একটি আবেদনপত্র পেয়েছি। এলাকাবাসীর আবেদনপত্র মোতাবেক বিষয়টির সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর