কুড়িগ্রামে বন্যা ও নদী ভাঙনের কবলে পড়ে প্রতি বছর গৃহহীন হয় অসংখ্য পরিবার। এতে বিনষ্ট হচ্ছে চরের মানুষের বিভিন্ন কৃষি ফসল। ফলে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো পড়ে যায় চরম সংকটে। এমন পরিস্থিতিতে বন্যা ও নদী ভাঙনের শিকার ৭৫০ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে এসেছে একটি সংস্থা। তাদের সহযোগিতায় এসব পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে এবং পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবনমান। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ছোট বড় ১৬টি নদ-নদী বেষ্টিত জেলা কুড়িগ্রাম। আর এসব নদীর বুকজুড়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক চর। প্রতি বছর বন্যা ও নদী ভাঙনের ফলে নিঃস্ব হয় এসব চরের অনেক পরিবার। পরিবারগুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাক-সবজির বীজ দেওয়া হয় এবং স্বাবলম্বী করতে চরে উপযোগী ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন দুর্যোগে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সংস্থাটি। পরিবারগুলোর বন্ধন অটুট রাখার জন্য পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয় নিয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়। গতকাল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলা নদীর অববাহিকায় পাঙ্গারচর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এ গ্রামের ৩০টি বন্যাকবলিত পরিবার পারিবারিক আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড ছাড়াও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত হয়েছেন। এ এলাকার বাসিন্দা সাহাদ আলী ও মফিজুল ইসলাম জানান, আমাদের গ্রামে প্রবেশ করার রাস্তাটি বন্যায় ভেঙে চুরমার হয়। চলাচলে অনুপযুক্ত রাস্তাটি আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উন্নয়ন সংস্থাটির সহায়তায় মেরামত করি। এখন এ রাস্তা দিয়ে রিকশা ও অটোরিকশা খুব সহজেই চলতে পারে। ফলে আমরা আমাদের উৎপাদিত শাক-সবজি সহজেই হাট-বাজারে বিক্রি করতে পারি। আমাদের সন্তানরা স্কুলে যেতে পারে। হাসিনা বেগম নামে এক নারী জানান, আমাদেরকে সুশাসন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর আমরা এখন সচেতন হয়েছি। আমরা পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সংবিধান, সংসদ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন কোনো আইনি পরামর্শ প্রয়োজন হলে আমরা ওই সংস্থার মাধ্যমে তা করি এবং তারা আমাদের বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ প্রদান করেন। একই গ্রামের আঞ্জুমান আরা, খোদেজা ও আহাদ আলী জানান, আগে হাট থেকে রাসায়নিক সার কিনে আনতাম, এখন আমরা জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করি, ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছি। একই গ্রামের আঞ্জুমান আরা বেগম জানান, প্রকল্প থেকে আমাকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে একটি ভেড়া দিলে সেটি থেকে তিনটি বাচ্চা হয়। এখন আমার ঘরে চারটি ভেড়া; যার বাজারমূল্য ২৮ হাজার টাকা। আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর প্রায় ২৪ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি; যা আমার সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারছি।
এ ছাড়াও ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনে উন্নতি লাভ করি। আমার স্বামীর একার আয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে জেলার কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী এ তিন উপজেলার মোট ২৫টি চরে ৭৫০ জন সদস্যকে প্রকল্প সহায়তা প্রদান করে আসছি। কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, কুড়িগ্রামের তিন উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপ ৭৫০টি পরিবারকে ভেড়া প্রদান করে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্পসময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাসেদুল হাসান জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর চরে বসবাসরত এসব পরিবারকে ফ্রেন্ডশিপ ভেড়াসহ নানান সহায়তা করছে যা তাদের ভাগ্যোন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।