বগুড়ায় দিন দিন শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হঠাৎ করে যেন শীত ও কুয়াশা চেপে বসেছে বগুড়ায়। দিনে কম অনুভূত হলেও সন্ধ্যা থেকে বেশ শীত পড়ছে। সেই সঙ্গে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মতো কুয়াশাও ঝরছে। শহরের মধ্যে কুয়াশার পরিমাণ কম হলেও শহরতলী ও গ্রামে বেশ দেখা মিলছে। দূরের যাত্রীদের পরনের পোশাক কিছুটা ভিজে যাচ্ছে কুয়াশায়। গতকাল দিনে সূর্যের আলো কম থাকায় শীত বেড়েছে। শীতের কারণে শহরের ফুটপাত ও হকার্সসহ বিভিন্ন মার্কেটে শীতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক পড়েছে। জানা যায়, বগুড়ার শহরতলীতে দুপুর পর্যন্ত থাকছে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। বেলা করে কুয়াশা থাকায় প্রতিদিন তাপমাত্রার পারদ নিচের দিকে কমছে। নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ জড়সড় হয়ে পড়েছেন। দিনের বেলাও থাকছে শীত। দিনের চেয়ে রাতের শীতই বেশি। তবে শীতকে পুঁজি করে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা পোশাকের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকগুণ। জেলা শহরের ফুটপাতে গরম কাপড় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন দামের ও মানের এ শীত নিবারণের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। বগুড়া শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট-বড় মার্কেট ও শপিংমলে চাদর, কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার, কার্ডিগান, শাল, হাতমোজা ও কানটুপিসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিত্তবানরা ছুটছেন শহরের বড় বিপণিবিতানগুলোয়। আর নিম্নআয়ের মানুষ গরম কাপড় কিনতে ফুটপাতের দোকানে ভিড় করছেন। শহরের নিউ মার্কেট, আল-আমিন কমপ্লেক্সে, রানার প্লাজা, হকার্স মার্কেট, রেলওয়ে মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে জমে উঠেছে গরম কাপড় কেনাবেচা। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে শীতের কাপড়। তবে শহরের হোটেল পট্টি সড়কের ওপর বিক্রি করা হচ্ছে বাহারি রকমের চাদর, শাল ও কম্বল। এখানে দাম অনেকটা কম হওয়ায় বিক্রিও বেশি। বেশিরভাগ ক্রেতারা পছন্দ মতো শীতের কাপড় এখান থেকে ক্রয় করে থাকে। ফুটপাত ব্যবসায়ী ৭০ বছরের আক্তার জানান, তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখানে ব্যবসা করে আসছেন। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তিনি এখনো তার ব্যবসা ধরে রেখেছেন। তার বাড়িতে তাঁত শিল্প রয়েছে। নিজেই শীতের বাহারি রকমের চাদর তৈরি করেন। তার কাছে বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসেন চাদর নিতে। তিনি আরও জানান, প্রতি বছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শীতের কাপড় বেচাকেনা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি এই দুই মাস সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। আরেক ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বাবু জানান, তিনি ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে এখানে তার ব্যবসা পরিচালন করে আসছেন। এখানে মোট ১৭টি দোকান রয়েছে। এখন দিনে শীত কম যার কারণে ক্রেতাদের ভিড় তেমন একটা নেই। আর কিছু দিন পর শীত বাড়তে পারে। তখন বিক্রিও বেড়ে যাবে। ফুটপাতে দোকান হলেও এখানে ভালো মানের শীতের কাপড় বিক্রি করা হয়। দিনে গড়ে প্রতিটি দোকানে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, এখানে প্রতিটি চায়না ডাইস কম্বল বিক্রি করা হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। জোড়াতালি কম্বল বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, এক কালার চাদর বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, পাখি চাদর বিক্রি করা হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, টাঙ্গাইলের জামদানি ও মনিপুরি চাদর বিক্রি করা হয় ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, বগুড়ার তৈরি ছেলেদের খদ্দর চাদর বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, শাল বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং টাঙ্গাইলের শাল বিক্রি করা হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। বগুড়া শহরের বনানী, ছিলিমপুর, চারমাথা এলাকার একাধিক যানবাহন চালক জানান, দিনের বেলাতেও হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। দুপুরেও থাকছে কুয়াশা। অতি সাবধানতাই চলাচল করতে হচ্ছে।
ফাঁকা স্থানগুলোয় কুয়াশার দাপটে গাড়ি চালানো কষ্টকর। এদিকে ফসলের খেতে ঘনকুয়াশার কারণে পিঁয়াজ, উঠতি আলুর খেত, শাকের খেত ফলনে প্রাকৃতিক বাধার সৃষ্টি হতে পারে বলে চাষীরা শঙ্কিত। ক্রেতা শহীদুল ইসলাম জানান, দিনে কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। শীতের কাপড় কিনতে হচ্ছে। শীত নিবারণের পোশাকের দামও দিগুণ হয়েছে। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু জানান, শীতের কারণে মানুষের নিউমোনিয়া, সর্দি, জ্বর, কাশি, আমাশয় রোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এসব রোগে ইতোমধ্যে ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংবাদও পাওয়া যাচ্ছে।