বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দখল-দূষণের কবলে সুতাং নদ

জাকারিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ

দখল-দূষণের কবলে সুতাং নদ

একটা সময় ছিল যখন বড় বড় নৌকা পাল তুলে প্রায় উড়ে যেত খরস্রোতা সুতাং নদ দিয়ে। জেলেদের জালে ধরা পড়ত রুই, কাতলা, বোয়ালসহ হরেকরকমের মাছ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে সেই দৃশ্য। ক্রমাগত দখল-দূষণ আর শিল্পবর্জ্যে অস্তিত্ব বিলীনের পথে নদটির। নদটির অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, এর পানি ব্যবহার দূরের কথা, নদের প্রায় আধা কিলোমিটার দূর দিয়েও হাঁটাচলা করা যায় না। উজান থেকে নেমে আসা শিল্পবর্জ্যরে ফলে নদের পানি কালো আকার ধারণ করে এখন লালচে আকারে পরিণত হচ্ছে। ফলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে নদের আশপাশ এলাকায়। দুর্বিষহ হয়ে উঠছে নদের পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা। পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসাম্য, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুতাং নদটি বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তসীমান্ত নদ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৬ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। সুতাং নদ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর লাখাই উপজেলা দিয়ে কালনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। একটা সময় নদটি ঐতিহ্যের প্রতীক থাকলেও বর্তমানে সাধারণ মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদটি থেকে সাধারণ মানুষ না পারছে কৃষিকাজের জন্য পানি তুলতে, না পারছে মাছ ধরতে। শুধু তাই নয়, নদের বিষাক্ত পানি গরু-ছাগল পর্যন্ত মুখে দেয় না। পানিতে নামে না হাঁস-মুরগিও। তাই নদের আগের অবস্থা ফেরানোর দাবি স্থানীয়দের।

সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অলিপুরে সড়কের উভয় পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক কলকারখানা। কারখানাগুলোয় বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) ব্যবহার করা কথা থাকলেও বেশির ভাগ কারখানা তা মানছে না। আবার কয়েকটি কারখানায় ইটিপি রয়েছে নামমাত্র। অতিরিক্ত খরচের ভয়ে নিয়মিত চালানো হচ্ছে না ইটিপি। ফলে পরিবেশ অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসনকে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে তারা। কারখানাগুলোর ক্রমাগত বর্জ্যই এখন কাল হয়েছে নদের পাড়ের বাসিন্দাদের। যদিও এর বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর। জেলা প্রশাসন বলছে, নদটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সুতাং নদের পানি দিয়ে একসময় হাজার হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ করা হতো। এখন সেই নদ থেকে এক বালতি পানিও তোলা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, বিষাক্ত পানি শরীরে কোনোভাবে লেগে গেলে চুলকানিসহ বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় বেশ কিছু জমি পতিত থাকলেও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে কৃষিকাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ ছাড়া নদের পানিতে গিয়ে বিষাক্ত বর্জ্যরে ফলে হাঁস-মুরগি মারা যাচ্ছে। তারা বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বারবার পরিদর্শন করে যায় কিন্তু কাজের কাজ হয় না কিছুই। এ ছাড়া সুতাং নদের বুল্লা অংশে বেলেশ্বরের বান্নি হতো। সেখানে হাজার হাজার হিন্দুধর্মাবলম্বী পুণ্য¯œান করত। এখন পুণ্যস্নান দূরের কথা, নাকমুখ ঢেকেও নদের পাড়ে যাওয়া যায় না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর